
ছবি: প্রতীকী
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো হৃদয় বা হার্ট। প্রতিদিন এই হৃদয় আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত পাম্প করে জীবনধারণে সাহায্য করে। কিন্তু বর্তমানের ব্যস্ত জীবনযাপন, মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের অভাব এবং রাগ বা স্ট্রেস—সব মিলিয়ে হার্ট সমস্যার ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় হৃদয়কে সুস্থ রাখার অন্যতম সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে নিয়মিত হাঁটা। তবে শুধু হাঁটলেই চলবে না, হাঁটার সময় রাগ না করে মনকে শান্ত রাখাও জরুরি।
রেগে গেলে আমাদের শরীরের ভেতরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। রাগ মানে শুধু মনের অভিব্যক্তি নয়, এটি এক ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়াও বটে। রাগলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোন বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়ায়, হৃদস্পন্দন দ্রুত করে এবং হার্টে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ অতিরিক্ত রাগের মধ্যে থাকেন, তাহলে তার হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। আবার কেউ কেউ রেগে গিয়ে হাঁটতে বের হন, ভেবে নেন যে হাঁটা মানেই স্বাস্থ্য ভালো রাখা। কিন্তু যদি আপনি রাগের মাথায়, দুশ্চিন্তায় বা বিরক্তি নিয়ে হাঁটেন, তাহলে শরীর-মন কোনওটাই উপকার পাবে না বরং হার্টের ওপর চাপ আরও বাড়বে।
তাই, হাঁটার সময় মানসিক প্রশান্তি থাকা খুব জরুরি। সকালবেলা বা বিকেলের দিকে খালি পেট বা হালকা নাস্তার পর কিছুটা সময় নিয়ে মন শান্ত করে হাঁটতে বের হওয়া ভালো। হাঁটার সময় যদি প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে হাঁটেন, গাছপালা দেখেন, হালকা বাতাস অনুভব করেন, পাখির ডাক শুনেন—তাহলে মন আপনাতেই শান্ত হয়। এই শান্ত মন শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কর্টিসল হরমোন কমিয়ে দেয়। ফলে হার্টের ওপর চাপ পড়ে না, বরং এটি আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
হাঁটার আরেকটি উপকার হলো এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। আমরা জানি, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন হার্টের বড় শত্রু। নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে শরীরের ক্যালরি খরচ হয়, পেটের মেদ কমে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তনালিগুলো নমনীয় থাকে। এইসব উপকারিতা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে আবারও বলতে হয়, এই হাঁটা যেন রাগ বা মানসিক উত্তেজনার মধ্যে না হয়।
এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ধীরে ধীরে মন শান্ত রেখে হাঁটেন, তাদের মধ্যে হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং রাগ অনেক কম থাকে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যও এটি কার্যকর। মনের শান্তি মানেই শরীরের সুস্থতা, আর শরীর সুস্থ থাকলে হার্টও ভালো থাকবে।
সবশেষে, নিজের ও প্রিয়জনের জন্য একটি অভ্যাস গড়ে তুলুন— প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটবেন। হাঁটার সময় রাগ কিংবা মানসিক অস্থিরতা দূরে রাখবেন। যদি সম্ভব হয়, হালকা গান শুনে বা প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটুন। কারও ওপর রাগ জমে থাকলে সেটি ঝেড়ে ফেলুন, ক্ষমা করে দিন। মনে রাখবেন, রাগ করে হাঁটলে উপকার নয়, বরং ক্ষতিই বেশি হবে।
তাই আজ থেকেই শুরু করুন শান্তভাবে হাঁটার অভ্যাস। রাগ নয়, হাসিমুখে হাঁটুন। কারণ, হার্ট ভালো রাখতে রেগে না গিয়ে হাঁটুন—এটাই এখনকার সময়ের সবচেয়ে সহজ অথচ কার্যকরী পরামর্শ।
এম.কে.