
আত্মনিয়ন্ত্রণে সহায়ক এই কথাগুলো বারবার বলুন নিজেকেই, যখন ভেঙে পড়ছেন মনে হয়। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই সহজ অথচ কার্যকর বাক্যগুলো একদিকে যেমন মানসিক চাপ কমায়, তেমনই আপনার অনুভূতিগুলোর দখল নিতে সাহায্য করে।
জীবনে এমন কিছু দিন আসে, যখন অনুভূতিগুলো হঠাৎই সবকিছু গ্রাস করে ফেলে। তখন যেন কিছুই ঠিকমতো কাজ করে না, মাথা কাজ করে না, শরীর হাঁপিয়ে ওঠে। কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট কৌশল আপনাকে ভেঙে পড়া থেকে বাঁচাতে পারে।মনোবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে, যেকোনো আবেগপ্রবণ পরিস্থিতিতে কিছু নির্দিষ্ট বাক্য নিজেকে বললে মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসে দ্রুত। নিচে এমনই পাঁচটি শক্তিশালী বাক্য দেওয়া হলো, যা আপনাকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শান্ত করে তুলতে পারে।
১. “শুধু শ্বাস নাও”
অতি সাধারণ মনে হলেও, যখন আবেগ চরমে ওঠে তখন শ্বাস নেওয়ার বিষয়টি আমরা প্রায় ভুলে যাই। ঠিক যেমন আপনি কোনো বিশাল ট্রাককে ওভারটেক করছেন হাইওয়েতে স্টিয়ারিং ধরে রাখছেন আঁকড়ে, আর মনে মনে প্রার্থনা করছেন যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি তখন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে রেখেছেন।
পরের বার এমন মুহূর্তে, গভীর শ্বাস নিন। পেটের ওপর হাত রেখে তিন গুনে নিঃশ্বাস নিন এবং তিন গুনে ছেড়ে দিন। কয়েকবার এটি করলেই দেখবেন হৃদস্পন্দন ধীরে আসছে, মাথা পরিষ্কার হচ্ছে। গভীর শ্বাস নেওয়া কেবল মন শান্ত করে না, এটা চিন্তা-শক্তিও বাড়ায়। ফলে আপনি আবেগের মুহূর্তে বেশি সচেতন হয়ে উঠবেন।
২. “এই আবেগটা কী থেকে আসছে?”
শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনার পর পরবর্তী ধাপ হলো অনুভূতিটা কী তা চিহ্নিত করা। আপনি কি দুঃখিত? উদ্বিগ্ন? রাগান্বিত? ভয় পাচ্ছেন?
এই প্রক্রিয়াকে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন “ইমোশনাল অ্যাওয়ারনেস” যেখানে আপনি অনুভূতিকে চিহ্নিত করেন এবং তাতে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেন। এতে করে আবেগটি আর নিয়ন্ত্রণ হারায় না।
৩. “আমি একটু সময় নিয়ে এই অনুভূতিটা অনুভব করি”
আবেগ জিনিসটা অসহ্য রকম কষ্টদায়ক হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি অনুভূতিকে দমন করি, তাকে ঢেকে ফেলি খাবার, মদ বা অন্যকিছুর মাধ্যমে, তাহলে তা শুধু বেড়ে ফিরে আসে। তাই ভয় পেলেও সেই অনুভূতিকে জায়গা দিন। একটু সময় নিন নিজেকে বোঝার জন্য।
গবেষণা বলছে, আবেগকে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বা দমন না করে যদি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে সেটিকে বোঝা ও গ্রহণ করা সহজ হয়। এতে আপনি আত্ম-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
৪. “এটা এখনই ঠিক করতে হবে না”
আপনি শ্বাস নিয়েছেন, আবেগ চিহ্নিত করেছেন, এবং সেটা অনুভব করেছেন। এরপরের ধাপটি হলো আবেগটি প্রক্রিয়াজাত করা।এই পর্যায়ে মনে রাখা জরুরি, আবেগকে ব্যাখ্যা করলেও সেটা এখনই ঠিক করতে হবে এমন নয়। আবেগকে সময় দিন, ধীরে ধীরে সব সহজ হয়ে যাবে।
৫. “এটা আমি আর বহন করতে চাই না”
সবশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আবেগ থেকে মুক্তি দেওয়া। অনেকেই কষ্ট বা রাগ জমিয়ে রাখেন, কিন্তু সেটি শরীর ও মনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
একটানা চাপা রাগ বা দুঃখ রাখলে শারীরিক অসুস্থতা, তিক্ততা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দিতে পারে। তাই অনুভব করুন, বোঝার চেষ্টা করুন, এবং শেষে তাকে বিদায় দিন।যদি কোনো সময় সেই আবেগ ফিরে আসে, তাহলেও আর ভয় নেই। আপনি জানেন, কীভাবে সেটিকে সামলাতে হয়।আবেগ যখন চরমে ওঠে, তখন নিজের ভেতর তাকিয়ে দেখা বেশ কঠিন। মাথা তখন ঝাপসা, হৃদস্পন্দন অস্থির। কিন্তু শুধু যদি আপনি নিজেকে বলেন “শুধু শ্বাস নাও”, তাহলেই অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব।আর সেই শ্বাসের পর, যখন আপনার হৃদস্পন্দন ধীর হবে, মাথা ঠাণ্ডা হবে তখনই আপনি বাকি ধাপগুলোও সহজে গ্রহণ করতে পারবেন।
ভাবুন তো, যদি আপনি আর সেই অস্থির অনুভূতিগুলোকে নিজের ভেতর জমিয়ে না রাখেন, তাহলে কেমন হতো? হয়তো ঠিক তখনই আপনি নিজেকে নতুনভাবে চেনার সুযোগ পাবেন।
সূত্র:https://tinyurl.com/3dwvyxyb
আফরোজা