
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তে শর্করার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, কিডনি বিকল, স্নায়ুর ক্ষতি, চোখের সমস্যা ও মানসিক জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে আপনি নিজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন রক্তে শর্করার মাত্রা। নিচে উল্লেখ করা হলো এমন ১০টি কার্যকর উপায়।
১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
আপনার লক্ষ্যমাত্রা কত হওয়া উচিত তা চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন। বাড়িতে গ্লুকোমিটার বা কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটর (CGM) ব্যবহার করে দিনে একাধিকবার রক্তে শর্করার মাত্রা মাপা উচিত।
২. কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমান
কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই কার্ব কমিয়ে খাদ্যতালিকা সাজালে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তবে একেবারে বাদ না দিয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করুন।
৩. সঠিক ধরনের কার্ব খাওয়ার চেষ্টা করুন
ফাইবারযুক্ত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন—
-
শিম জাতীয় খাবার
-
কোয়িনোয়া
-
ওটস
-
মিষ্টি আলু
-
বাদাম
-
শাকসবজি
এগুলো ধীরে রক্তে শর্করা ছাড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
মোটা হওয়ার সঙ্গে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে ওজন বাড়লে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়। তাই মোটামুটি ওজন বজায় রাখা জরুরি।
৫. খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
একবারে বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্লেট নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শরীরের কোষগুলো গ্লুকোজ গ্রহণে সক্রিয় হয়। হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা হালকা শরীরচর্চা শুরু করতে পারেন।
৭. প্রচুর পানি পান করুন
শরীরে পানি কমে গেলে গ্লুকোজ ঘন হয়ে যায়। তাই দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা জরুরি। তবে চিনি বা ক্যালরি-যুক্ত পানীয় পরিহার করুন।
৮. হারবাল সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার (চিকিৎসকের পরামর্শে)
কিছু ভেষজ উপাদান রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় জানা গেছে, যেমনঃ
-
মেথি
-
দারুচিনি
-
হলুদ (কারকিউমিন)
-
তিতকরলা
-
জিনসেং
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না।
৯. মানসিক চাপ কমান
চাপের সময় কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, ঘুম— এসব মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
১০. পর্যাপ্ত ঘুমান
ঘুম কম হলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে ও শর্করার নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুম জরুরি।
উচ্চ রক্তে শর্করার ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, পরিমিত কার্ব গ্রহণ, ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ডায়াবেটিস চিকিৎসক ও ডায়েটিশিয়ানের সহায়তায় একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং তা মেনে চলুন।
Jahan