
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) রোগীদের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন-এর বিজ্ঞানীরা এক নতুন মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে রোগীর জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করা যাবে কোন জৈবিক ওষুধ (biologic) তার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বর্তমানে RA চিকিৎসায় ব্যবহৃত বায়োলজিকস লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কোষীয় প্রক্রিয়ায় কাজ করে, যা পুরো রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দমন না করে শুধুমাত্র প্রদাহের উৎসে আঘাত করে। যদিও এ ধরনের চিকিৎসায় অনেক সময় সঠিক ওষুধ বাছাই করা কঠিন হয়, কারণ প্রতিটি রোগীর শরীরের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন।
নির্ভুল ওষুধ নির্ধারণে সাফল্য ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত
নতুন এই প্রযুক্তি প্রথম চেষ্টাতেই ৭৯–৮৫% রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পরীক্ষামূলক ক্লিনিকাল ফলাফলে। গবেষণাটি সম্প্রতি Nature Communications জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় RA আক্রান্ত রোগীর জয়েন্ট থেকে টিস্যু নমুনা নিয়ে ৫২৪টি জিনের কার্যক্রম পরিমাপ করা হয়। তারপর এই ডেটা বিশ্লেষণ করে তিনটি নির্দিষ্ট বায়োলজিকস — এটানারসেপ্ট (etanercept), তোসিলিজুম্যাব (tocilizumab), এবং রিটুক্সিম্যাব (rituximab) — এর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে, তা নির্ধারণ করা হয়।
চিকিৎসায় দেরি মানেই দীর্ঘস্থায়ী কষ্ট
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী ও যন্ত্রণাদায়ক রোগ, যা কেবল জয়েন্ট নয়, শরীরের বিভিন্ন অংশকেও প্রভাবিত করতে পারে। RA রোগীরা প্রায়ই বছরের পর বছর ধরে সঠিক ওষুধের খোঁজে থাকেন, যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় শারীরিক কষ্ট, অনিশ্চয়তা ও মানসিক হতাশার মধ্য দিয়ে।
RA রোগী এবং SUNY Upstate Medical University-র বায়োএথিসিস্ট ড. লিজ বাওয়েন বলেন, “একেকজনের শরীরে একেক ওষুধ ভিন্নভাবে কাজ করে। কারও জন্য যেটা চমৎকার ফল দেয়, অন্য কারও জন্য সেটা একেবারেই কাজ করে না। এটা মানসিকভাবে চরম হতাশারও কারণ হতে পারে।”
রোগীর জন্য সঠিক ওষুধই চিকিৎসার চাবিকাঠি
গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক কনস্টান্টিনো পিটজালিস বলেন, “যদি প্রথমবারেই সঠিক ওষুধ নির্ধারণ করা যায়, তাহলে রোগীর কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচও হ্রাস পাবে। এটি রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান—উভয়ের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।”
তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসা (personalized medicine) এখনো একটি বিকাশমান ক্ষেত্র। ড্রেসডেনের সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ সায়েন্সের স্নাতক সায়েদা নাসরিন সতর্ক করেন, “এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটা থাকা প্রয়োজন। না হলে এটি গড়পড়তা চিকিৎসার চেয়ে বিপজ্জনকও হতে পারে।”
বর্তমানে প্রযুক্তিটির বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক অংশীদার খোঁজা হচ্ছে। ঠিক কবে নাগাদ এটি স্বাস্থ্যসেবার সাধারণ ব্যবস্থায় যুক্ত হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি।
Jahan