
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও মানসিক চাপে তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ৬০ মিনিটকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়—এই সময়ের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু হলে বাঁচানো যায় জীবন, কমানো যায় হৃদযন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি।
হার্ট অ্যাটাক আর কেবল বয়স্কদের রোগ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২০ বা ৩০-এর ঘরের তরুণরাও মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় বসে কাজ, জাঙ্ক ফুড, ঘুমের অভাব, ধূমপান ও মানসিক চাপকে দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার একমাত্র উপায় দ্রুত চিকিৎসা—বিশেষ করে অ্যাটাকের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই।
‘গোল্ডেন আওয়ার’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
হার্ট অ্যাটাকের পর প্রথম ৬০ মিনিটকে চিকিৎসকেরা বলেন ‘গোল্ডেন আওয়ার’। এই সময়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায় এবং হার্ট মাংসপেশির স্থায়ী ক্ষতিও অনেকাংশে ঠেকানো যায়।
পরিসংখ্যান বলছে, তীব্র হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত অর্ধেকেরও বেশি রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান। এই প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা গেলে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হয়।
প্রথম এক ঘণ্টা কেন জীবন বাঁচাতে পারে?
হার্ট অ্যাটাকের পরের প্রথম দুই ঘণ্টায় হার্টের অনিয়মিত রিদম যেমন ভেন্ট্রিকুলার টাকিকোর্ডিয়া বা হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে আইসিসিইউ-তে তাৎক্ষণিক পেসমেকার বা ডিফিব্রিলেটর ব্যবহার করতে হয়। যদি ক্যাথল্যাব তৎক্ষণাৎ না পাওয়া যায়, তবে রক্ত জমাট গলিয়ে দেওয়া থ্রম্বোলাইটিক ইনজেকশন দেয়া হয়।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কীভাবে কাজ করে?
- হার্টের ব্লকেজ শনাক্ত করতে প্রথমে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয়
- ব্লকেজে গাইডওয়্যার ঢোকানো হয়
- বেলুনের সাহায্যে ব্লকেজ খোলা হয়
- তারপর স্টেন্ট বসানো হয়, যা ধাতব নল আকৃতির ও ধমনি খোলা রাখতে সাহায্য করে
যদি শুরুতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি সম্ভব না হয়, তবে থ্রম্বোলাইটিক ইনজেকশন দিয়ে ৬ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানো হয়। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে এই চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা অনেক কমে যায়।
হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ চিনে নিন
- বুকে ভারী চাপ বা জ্বালাপোড়া
- বাম হাতে, গলায় বা পিঠে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
- শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম বা মাথা ঘোরা
- বমি ভাব বা মৃত্যুভীতি
- বিশ্রাম নেয়ার পরেও ব্যথা না কমা
- হঠাৎ বা ধীরে ধীরে বুকে চাপ অনুভব
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ হার্ট চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে ছুটে যেতে হবে। গোল্ডেন আওয়ার পার হওয়ার পর প্রতি আধা ঘণ্টা দেরিতে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ১% হারে কমে।
দ্রুত চিকিৎসাই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ঠেকানোর চাবিকাঠি
বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করেন, সময়মতো চিকিৎসাই হার্ট অ্যাটাকের পর স্থায়ী ক্ষতি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে চিকিৎসা পেলে অনেক রোগীই কোনো স্থায়ী সমস্যা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে দেরি করলে হার্টের পেশি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা যেহেতু বাড়ছে, তাই উপসর্গ সম্পর্কে সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এখন আগের চেয়েও জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব