
ছবি: প্রতীকী
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির ব্যর্থতার মতো বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। এই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বাইয়ের চিকিৎসক ড. প্রমোদ ত্রিপাঠী সম্প্রতি একটি নতুন পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি এটিকে ‘MAP ফর্মুলা’ নামে পরিচিত করেছেন। তিন ধাপের এই পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে জীবনধারাভিত্তিক এবং ঔষধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলার উপায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
MAP-এর ‘M’ হলো ম্যাগনেসিয়াম। এটি এমন একটি খনিজ উপাদান যা রক্তনালীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রক্তনালীগুলো অনেক সময় সংকুচিত থাকে, ম্যাগনেসিয়াম সেগুলোকে স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে। ড. ত্রিপাঠীর মতে, কুমড়ার বীজ ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এছাড়া সবুজ শাকসবজিতেও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, কারণ এগুলোতে ক্লোরোফিল থাকে। তিনি আরও বলেন, “যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তারা ২০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্লাইসিনেট সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।”
‘A’ ধাপটি হলো অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিং—যা মানসিক চাপজনিত সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেমের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপভোগীদের মধ্যে এই নার্ভ সিস্টেম অত্যধিক সক্রিয় থাকে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। ড. ত্রিপাঠী বলেন, “আমাদের অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেমে দুটি অংশ থাকে—সিমপ্যাথেটিক ও প্যারাসিমপ্যাথেটিক। সিমপ্যাথেটিক অংশ সক্রিয় হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই বুকে শ্বাস না নিয়ে পেট দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথমবারে কঠিন মনে হলেও নিয়মিত অভ্যাস করলে এটি সহজ হয়ে যাবে।”
তিনি আরও জানান, “প্রতি ঘণ্টায় অন্তত তিন থেকে পাঁচবার পেট দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে, কারণ চাপই উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ।” তিনি হাইপারটেনশন রিভার্সাল যোগ ব্যায়াম করারও পরামর্শ দেন।
MAP-এর ‘P’ হলো প্রলংগড ফাস্টিং বা দীর্ঘ সময় উপবাস থাকা। ড. ত্রিপাঠীর মতে, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ হলো দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এটি সোডিয়াম ধরে রাখে, নার্ভ সিস্টেমকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে এবং রক্তনালীর ক্ষতি করে—যা সবই রক্তচাপ বাড়ায়।
তিনি বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা উপবাস থাকা জরুরি। এটি ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাভাবিক রক্তচাপে ফিরিয়ে আনে।”
ড. ত্রিপাঠীর এই MAP ফর্মুলা ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস কমানো এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার একটি প্রাকৃতিক, সহজ ও কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা চাইলে এই তিনটি ধাপ তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করে উপকার পেতে পারেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এম.কে.