
ছবি: সংগৃহীত
কলা—সহজলভ্য, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। অনেকেই সকালে নাশতায় বা হালকা ক্ষুধা মেটাতে কলা খেতে পছন্দ করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে: কলা কি শুধু পটাশিয়ামের ভালো উৎস, নাকি এতে থাকা চিনির পরিমাণ বেশি বলে সাবধান হওয়া দরকার? প্রতিদিন কলা খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? আর খাওয়া উচিতই যদি হয়, তবে কতটা?
চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রতিদিন কলা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাও।
১. শক্তি বাড়ে
কলা শর্করার (কার্বোহাইড্রেট) চমৎকার উৎস, যা শরীরের প্রাথমিক জ্বালানি। এতে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি৩ ও বি৬, যা শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। তবে শুধু কলা খেলেই রক্তে চিনি হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, তাই কলার সঙ্গে বাদাম, দই বা সেদ্ধ ডিম খেলে শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক
কলা সহজে হজম হয় না এবং পেট ভরা রাখে, যা অযথা খাওয়া কমায়। এটি সরাসরি ওজন কমায় না ঠিকই, তবে ডায়েটের অংশ হিসেবে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফল ও সবজির মাধ্যমে ফাইবার গ্রহণ বাড়ালে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৩. আঁশের চাহিদা পূরণে সহায়ক
একটি মাঝারি কলায় থাকে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার। মার্কিন খাদ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, নারীদের দৈনিক ২৮ গ্রাম ও পুরুষদের ৩৪ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন। কলায় থাকা পেকটিন ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হজমের গতি ঠিক রাখে এবং উপকারী অন্ত্রব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।
৪. হৃদ্রোগ প্রতিরোধে কার্যকর
একটি মাঝারি কলায় থাকে প্রায় ৪২২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম—যা দৈনিক চাহিদার প্রায় ৯%। পটাশিয়াম হৃদ্পিণ্ড ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন কলা সহ ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে DASH ডায়েট।
৫. দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি হ্রাস
কলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় জানা গেছে, কলায় থাকা কিছু উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।
একটি কলার পুষ্টিগুণ (USDA অনুযায়ী):
- ক্যালরি: ১০৫
- শর্করা: ২৭ গ্রাম
- আঁশ: ৩ গ্রাম
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- চিনিঃ ১৪ গ্রাম
- মোট চর্বি: ০ গ্রাম
- পটাশিয়াম: ৪২২ মি.গ্রা
প্রতিদিন কতটা কলা খাবেন?
সাধারণভাবে প্রতিদিন ১ থেকে ২টি কলা খাওয়া নিরাপদ। তবে কলা কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি প্রোটিন বা ফ্যাটের সঙ্গে খাওয়াই ভালো।
তবে যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরে জমে গেলে (হাইপারকালেমিয়া) হৃদ্যন্ত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কলা একটি পুষ্টিকর ও সহজলভ্য ফল। এটি হজমে সাহায্য করে, হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তবে সব ভালো জিনিসের মতোই, কলাও খেতে হবে পরিমিত এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে।
সূত্র: https://www.eatingwell.com/article/8009266/benefits-of-bananas/
রাকিব