
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তা ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে রক্তে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতি হৃদরোগ, কিডনি বিকলতা এবং স্নায়ুবিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। হাইপারগ্লাইসেমিয়া—অর্থাৎ রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ—বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসার অভাবে এই সমস্যা গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতায় রূপ নিতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সতর্কতামূলক লক্ষণ চিনে নেওয়া খুবই জরুরি। নিচে এমন ৫টি সাধারণ লক্ষণের কথা বলা হলো, যেগুলো অনেকেই সাধারণ দুর্বলতা কিংবা ক্লান্তি বলে ভুল করে থাকেন—
১. অবিরাম ক্লান্তি
প্রচণ্ড ক্লান্তি কিংবা শক্তি কমে যাওয়া অনেক সময়ই বিশ্রামের অভাবে হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের পরেও যদি শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অলসতা অনুভব করেন, তাহলে তা উচ্চ রক্তে শর্করার ইঙ্গিত হতে পারে। এই অবস্থায় শরীর পর্যাপ্ত গ্লুকোজ থাকলেও তা কার্যকরভাবে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে না, ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
২. অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও ঘন ঘন প্রস্রাব
দিনভর অতিরিক্ত পানি খাওয়ার ইচ্ছা এবং বারবার টয়লেটে যাওয়া—এই দুইটি লক্ষণও রক্তে অতিরিক্ত শর্করার দিকে ইঙ্গিত করে। কারণ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনিকে অতিরিক্ত শর্করা ছেঁকে বের করতে হয়, ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং আপনি আরও তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠতে পারেন।
৩. ঝাপসা দৃষ্টি
দৃষ্টিশক্তিতে হঠাৎ পরিবর্তন যেমন ঝাপসা দেখা বা চোখে ফোকাস করতে অসুবিধা হওয়াও রক্তে শর্করার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। গ্লুকোজের উচ্চমাত্রা চোখের লেন্সের চারপাশের তরলের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে দৃষ্টিশক্তিতে সাময়িক সমস্যা দেখা দেয়।
৪. ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব
ছোটখাটো কাটা বা আঁচড় সারতে যদি অস্বাভাবিক সময় লাগে, তাহলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তে শর্করা রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে শরীরের ক্ষত নিরাময়ের গতি ধীর হয়ে যায়।
৫. অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস
যদি আপনি ডায়েট না করেও ওজন হারাচ্ছেন, তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি। এটি তখন ঘটে যখন শরীর ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে শক্তির জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না এবং পরিবর্তে পেশি ও চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি করতে শুরু করে। এর ফলে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক যদি দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায়, তবে দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। সময়মতো সচেতনতা আপনাকে ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য মারাত্মক জটিলতা থেকে বাঁচাতে পারে।
রিফাত