
ছবি: জনকণ্ঠ
বাংলাদেশের প্রশাসনে নারী নেতৃত্বের অগ্রযাত্রা আজ আর শুধু স্লোগানে সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তব চিত্রেই তা দৃশ্যমান। কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ৯টিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারী কর্মকর্তারা। এছাড়া ৮টি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড পদেও কর্মরত আছেন নারীরা। এ এক গর্বের গল্প—নারীর দক্ষতা, মানবিকতা আর নেতৃত্বগুণে বদলে যাচ্ছে গোটা প্রশাসনিক কাঠামো।
নারী ইউএনও: নেতৃত্বে মানবিকতা আর সাহসিকতা
হোমনা, মেঘনা, তিতাস, দাউদকান্দি, ব্রাহ্মণপাড়া, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, মনোহরগঞ্জ ও লালমাই—এই নয়টি উপজেলার ইউএনও পদে দায়িত্বে আছেন নারী কর্মকর্তারা। প্রতিদিন মাঠ প্রশাসনে থেকে তারা পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, প্রতিরোধ করছেন বাল্যবিবাহ, দমন করছেন মাদক ও ইভটিজিং, এগিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রম। অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্থানীয় সমাজে ‘মা’ বা ‘অভিভাবক’ হিসেবেও সম্মানিত হচ্ছেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললেন ইউএনওরা:
হোমনার ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন,
“নারী ইউএনও হওয়ায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হয়নি। তবে এখনও সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন।”
দাউদকান্দির ইউএনও নাঈমা ইসলাম জানালেন,
“আমি নারী না পুরুষ—তা মুখ্য নয়, আমি একজন ইউএনও। দায়িত্ব পালনে লিঙ্গ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।”
মেঘনার ইউএনও হ্যাপী দাস বলেন, “শুরুর দিকে বাধা থাকলেও সফল হলে সবার সমর্থন পাওয়া যায়—even তাদের, যারা শুরুতে বিরোধিতা করে।”
নারী এসিল্যান্ডদের সক্রিয় অংশগ্রহণ:
নারী ইউএনওদের পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জনসেবা নিশ্চিত করতে ৮টি উপজেলায় নারী এসিল্যান্ডদের দেখা যাচ্ছে সম্মুখ সারিতে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, সিফাতুন নাহার (লাকসাম), নাসরিন (মনোহরগঞ্জ), সৈয়দ ফারহানা (ব্রাহ্মণপাড়া), মারজানা আক্তার (লালমাই), সোনিয়া হক (বুড়িচং), জাকিয়া, সরওয়ার লিমা (চৌদ্দগ্রাম), তানজিনা জাহান (সদর), উম্মে মুসলিমা (বরুড়া), লুৎফর নাহার শারমীন (মেঘনা)। তারা ভূমি দখল উচ্ছেদ, নামজারি, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করছেন।
জেলা প্রশাসনের অবস্থান:
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, “বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কুমিল্লার নারী কর্মকর্তারা নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই নারীরা কেবল সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন না, বরং মানুষের সেবায় তারা হয়ে উঠেছেন সমাজের বাতিঘর।”
সাব্বির