ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রংপুরের পথে এক বিস্ময়কর শিল্পী

মোঃ সুজা উদ্দিন,কন্ট্রিবিউট রিপোর্টার,রংপুর

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৩ মে ২০২৫

রংপুরের পথে এক বিস্ময়কর শিল্পী

ছবি: জনকণ্ঠ

রংপুরের বদরগঞ্জ এবং পীরগাছা উপজেলার স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় আজকাল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের দেখা মিলছে। একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি সবসময় একটি গামছা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন, ইটের টুকরা, চক আর ছাই দিয়ে এঁকে চলেছেন অসাধারণ সব চিত্রকর্ম। তার এই অপ্রত্যাশিত শিল্পকর্মগুলো পথচারীদের থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই শিল্পী রংপুরের স্টেশন এলাকার খোলা জায়গায় নিজের কল্পনার রঙ ছড়িয়ে দেন। কোনো ক্যানভাস নেই, নেই কোনো দামি রঙ-তুলি। তার ক্যানভাস এখানকার ধূলোমাটি আর রঙ বলতে ইটের গুঁড়ো, চকের টুকরা আর ছাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই সাধারণ উপকরণ দিয়েই তিনি ফুটিয়ে তোলেন তার মনের গভীরের কথা, তার অব্যক্ত উক্তি। তার প্রতিটি আলপনা যেন এক একটি গল্প, এক একটি অনুভূতি।
স্থানীয়রা জানান, এই ব্যক্তি দিনের পর দিন ধরে এখানে আছেন। তার নাম-পরিচয় কেউ জানে না। তার মানসিক বিকারগ্রস্ততার কারণে অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলেন, কিন্তু তার শিল্পকর্ম দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন। পথচারীরা দাঁড়িয়ে তার কাজ দেখেন, কেউ কেউ ছবি তোলেন। অনেকেই বিস্মিত হন এই ভেবে যে, একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি কীভাবে এত সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারেন।


তার আঁকা চিত্রকর্মগুলোতে প্রায়শই প্রকৃতির ছবি, বিমূর্ত নকশা এবং কিছু লেখা দেখা যায়। দেখে মনে হয়, তার বিক্ষিপ্ত মনের ভাবনাগুলোই যেন আকার নিচ্ছে এই আলপনাগুলোতে। এই শিল্পী যেন তার মানসিক সীমাবদ্ধতাকে পেরিয়ে শিল্পের এক নতুন ভাষা তৈরি করেছেন।


এই ব্যতিক্রমী শিল্পী রংপুরের মানুষের কাছে এক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, তার এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে তার ভেতরের কষ্ট বা অব্যক্ত ইচ্ছাগুলো প্রকাশিত হচ্ছে। তার এই নীরব শিল্পচর্চা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিভা কোনো পরিচয়ের ধার ধারে না, আর শিল্পের প্রকাশ হতে পারে যেকোনো পরিস্থিতিতে।

সাব্বির

×