ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবার কণ্ঠ একই রকম কেন লাগবে!

এনআই বুলবুল

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৯ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ২১:৪৩, ১৯ অক্টোবর ২০২২

সবার কণ্ঠ একই রকম কেন লাগবে!

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’ ‘ওই ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়’, ‘ফুল ফোটে ফুল ঝরে’, ‘আমার মাঝে নেই এখন আমি’, ‘এই জাদুটা সত্যি হয়ে যেত’র মতো অসংখ্য গান গেয়ে তিনি শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। ২০০৬ সালে ‘রানীকুঠির বাকী ইতিহাস’ সিনেমায় ‘আমার মাঝে নেই এখন আমি’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার লাভ করেন তিনি । দীর্ঘ সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারের জার্নি ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- এনআই বুলবুল

দুই মাসের মতো মাঝে দেশের বাইরে ছিলেন। কেমন ছিল এ সময়টা?
দেশের বাইরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যাইনি। গান নিয়েই দেশের বাইরে ছিলাম। প্রথমে আমেরিকাতে গিয়েছি। সেখানে একটি অ্যাওয়ার্ড পোগ্রামে অংশ নেই। এরপর দেশে ফিরে আবার অস্ট্রেলিয়াতে যাই। সেখানে চারটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। এর মধ্যে তিনটি অনুষ্ঠানে আমরা চার ভাইবোন একসঙ্গে পারফমেন্স করেছি। এখানে অংশ নেবার জন্য আমার ছোট বোন ইংলান্ড থেকে এসেছে। ১১, ১৭ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ছিল আমাদের মিলনমেলা। দেশের বাইরে এটি ছিল আমাদের একসঙ্গে অংশগ্রহণ করা। এটি আমাদের জন্য বেশ আনন্দের ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর আয়োজক ইফতেখার আলম সোহেলকে ধন্যবাদ আমাদের নিয়ে এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।
একসঙ্গে চার ভাইবোনের পারফর্মেন্সের অভিজ্ঞতা কেমন?
প্রথমেই বলেছি দেশের বাইরে আমরা চার ভাইবোন প্রথম একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছি। তাই এর প্রতি আমাদের ভালোলাগা অন্যরকম। এছাড়া যখন আমরা মঞ্চে ছিলাম, তখন একটি মেয়ে আমার হাত ছুঁয়ে বলল, আমি আমার বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখলাম। এটি আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এছাড়া একজন বয়স্ক মহিলা এসে আমাদের ধরে কান্না করেছেন।  সেখানে সবার ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। এ দিনগুলোর কথা আমাদের সব সময় মনে থাকবে।
নতুন কোনো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন?
অস্ট্রেলিয়ায় যাবার আগে একটি সিনেমার জন্য গান করেছি।  এরপর আর কোনো নতুন গানে কণ্ঠ দেয়া হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনাকে সক্রিয় দেখা যায়। ফেসবুকে আপনার চোখে কোন্ বিষয়টি বেশি পড়ে?
সবাই যা দেখে আমিও ফেসবুকে তাই দেখি। ভালো মন্দ মিলিয়েই ফেসবুক। তবে এতে শ্রোতাদের সঙ্গে সহজে সম্পৃক্ত থাকা যায়। এছাড়া ফেসবুকের কারণে আমার শৈশবের অনেক বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে।
আজকাল গানে কোন্ ত্রুটিগুলো বেশি দেখতে পান?
এখনকার অনেক শিল্পীর উচ্চারণে প্রচুর সমস্যা আছে। গানের কথার উচ্চারণ যদি ঠিক মতো না হয়, শ্রোতারা শুনে সেটিতে তৃপ্তি পান না। এছাড়া মেয়ে শিল্পীদের প্রায় সবার কণ্ঠ একই রকম শুনতে পাই। সবার কণ্ঠ একইরকম কেন লাগবে! যদি নিজস্বতা না থাকে তাহলে শ্রোতারা কিভাবে চিনবে? সত্যি বলতে, এখন কার কণ্ঠ কোন্টি সেটি বাছাই করা খুব কঠিন।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য কী বলবেন?
একটা ভালো গানের জন্য একটা ভালো কণ্ঠের পাশাপাশি ভালো কথা ও সুরের প্রয়োজন। একই সঙ্গে এটির ভালো সংগীতায়োজন করতে হয়। কিন্তু এখন গানে একসঙ্গে এগুলো পাওয়া যায় না।  তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই বেশ পরিশ্রম করে। কিন্তু এদের কেউ কেউ ভালো গাইড লাইন প্রচারের অভাবে আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে না জানা শিল্পীরাই সামনে চলে আসছে।
দীর্ঘ সময় ধরে গানের সঙ্গে আছেন। কোনো আপ্রাপ্তি বোধ করেন?
আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। মানুষের এত এত ভালোবাসা পাবার পর আর কোনো অপ্রাপ্তি থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এখনো যখন গভীর রাতে শুনি কেউ ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’ শুনতে তখন ভালোলাগা বেড়ে যায়।
এত বছর পরেও যখন একটি গান সবার মনে থাকে, এটিই একজন শিল্পীর বড় পাওয়া।

×