ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিশুদের অবশ্যই দেয়া উচিত

ইসরাত

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিশুদের অবশ্যই দেয়া উচিত

ছবি: সংগৃহীত

সন্তানকে বড় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তাদের ভালো আচরণ শেখানো। জীবনে সফল হতে সহায়তা করবে ভালো আচরণ। সন্তান হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক। সাধারণ আদবকেতা না জানার কারণে অনেক শিশুই বড় হয়ে নানা সমস্যায় পড়ে। প্রভাবিত হয় তাদের জীবনের প্রতিটি ধাপ। আদবকেতা আমাদের স্কুলেই শেখানো উচিত। কিন্তু আসলে স্কুলে এ ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পরিবারই হতে পারে এই আচরণগুলো শেখার জায়গা।

এই লেখাটি ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অভ্যাস সম্পর্কে, যা প্রতিটি শিশুকে শেখানো উচিত। এখানে সহজ এবং মানবিক ভাষায় তার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. মনোযোগী থাকা - বর্তমান মুহূর্তে উপস্থিত থাকা

মনোযোগী থাকা মানে হলো বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া এবং অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা। আজকের ব্যস্ত পৃথিবীতে এটি এমন এক ক্ষমতা, যা আমাদের জীবনকে সত্যিকারের উপভোগ করতে শেখায়। শিশুদের জন্য এটি হতে পারে সহজ কিছু অভ্যাস, যেমন: গভীর শ্বাস নেওয়া, তাদের চারপাশের জিনিসগুলো খেয়াল করা, বা প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা। যেমন, তারা বাতাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারে, পাখির ডাক শুনতে পারে, বা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পারে। এই ছোট্ট মনোযোগের মুহূর্তগুলো তাদেরকে শান্ত এবং গভীরভাবে পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত করে।

২. ক্ষমাশীলতা - রাগ-ক্ষোভ থেকে মুক্ত হওয়া

ক্ষমা করা শেখানো শিশুদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। রাগ বা অভিমান ধরে রাখলে তাদের মানসিকভাবে ভারী করে তোলে। অন্যকে ক্ষমা করা (এবং নিজেদের ভুলের জন্যও নিজেকে ক্ষমা করা) তাদের হৃদয়কে হালকা করে। তাদের শেখান, ভুল করলে ক্ষমা চাইতে এবং অন্য কেউ ভুল করলে তাকে ক্ষমা করতে। এই অভ্যাস শুধু তাদের মানসিক ভারমুক্ত করে না, বরং সহমর্মিতা ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।

৩. সহানুভূতি - অন্যের অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করা

সহানুভূতি মানে হলো অন্যদের কষ্ট বা অবস্থাকে বোঝা এবং তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া। শিশুদের শেখান কীভাবে বুঝতে হয় কেউ কষ্টে আছে কি না এবং কীভাবে দয়া ও সহানুভূতির সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি দুঃখী বন্ধুকে সান্ত্বনা দেওয়া বা কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে পাশে দাঁড়ানো সহানুভূতির একটি সহজ উদাহরণ। এই ছোট ছোট কাজগুলো তাদের আরও সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

৪. আধ্যাত্মিক কৌতূহল - গভীর প্রশ্ন করা

শিশুরা পৃথিবী, জীবন এবং মহাবিশ্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন করে। তাদের এই কৌতূহলকে উৎসাহিত করুন। তাদের সঙ্গে গভীর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করুন, যেমন: “তোমার কি মনে হয় পৃথিবী এত সুন্দর কেন?” অথবা “তুমি কেন মনে কর মানুষ একে অপরের প্রতি দয়া দেখায়?” এই আলোচনা তাদের মনের দরজা খুলে দেয় এবং জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এটি তাদের চিন্তাশীল হতে এবং নতুন কিছু শেখার জন্য উৎসাহিত করে।

এই অভ্যাসগুলো শিশুকে এমন একজন সদয়, সংবেদনশীল এবং আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যারা জীবনের পথে আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাবে।

ক্ষমা – ঘৃণা বা অভিমান ত্যাগ করা

শিশুদের কাছে ক্ষমা শেখানো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অভ্যাস, যা তাদের জীবনকে আরও সহজ এবং শান্তিপূর্ণ করে তোলে। রাগ বা অভিমান ধরে রাখা তাদের মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের আনন্দের পথে বাধা দেয়। তাদের শেখান যে অন্যদের (এবং নিজেদের) ক্ষমা করার মাধ্যমে তারা তাদের হৃদয়কে হালকা করতে পারে। যখন তারা ভুল করবে, তাদের ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব বোঝান এবং যখন অন্যরা ভুল করবে, তখন তাদের ক্ষমা করার উপকারিতা শিখান। একটি ক্ষমাশীল হৃদয় প্রেম, শান্তি এবং নিরাময়ের পথ উন্মুক্ত করে।

ক্ষমা শুধু অন্যদের প্রতি সদয় মনোভাব পোষণ করা নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক অভ্যাস যা মানুষকে শান্তি এবং ভালোবাসা দিতে সাহায্য করে। যখন শিশুরা ক্ষমা করতে শেখে, তারা সহজে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং তাদের মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়। ক্ষমা করা মানে পুরনো কষ্ট বা ক্ষোভের জগৎ থেকে মুক্তি পাওয়া এবং একটি পরিশুদ্ধ হৃদয়ে বসবাস করা।

সহানুভূতি – অন্যের অবস্থানে নিজেকে রাখা

সহানুভূতি মানে হচ্ছে অন্যের পরিস্থিতি বা দুঃখ বুঝে তার প্রতি সহানুভূতির সাথে প্রতিক্রিয়া জানানো। শিশুকে শেখান, যখন কেউ কষ্টে বা সমস্যায় আছে, তখন তাদের অনুভূতি বুঝে সহানুভূতি দেখাতে। এটি হতে পারে, একটি মন খারাপ করা বন্ধুকে সান্ত্বনা দেওয়া অথবা কেউ পড়ে গেলে তাকে সাহায্য করা।

সহানুভূতি শুধু সম্পর্ক শক্তিশালী করে না, বরং এটি শিশুদের নিজেদের বাহিরে চিন্তা করার এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। সহানুভূতির মাধ্যমে শিশু আরও ভালো মানুষ হয়ে ওঠে, যারা সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল এবং অন্যদের সাহায্য করতে আগ্রহী। সহানুভূতির মূল্য বোঝার মাধ্যমে তারা সঠিকভাবে মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং আরও সহানুভূতিশীল বন্ধু, সহকর্মী বা মানুষ হয়ে উঠতে পারে।

আধ্যাত্মিক কৌতূহল – বড় বড় প্রশ্ন করা

প্রত্যেক শিশু কখনও না কখনও পৃথিবী, জীবন, এবং মহাবিশ্বের ব্যাপারে বড় বড় প্রশ্ন করে। আধ্যাত্মিক কৌতূহলকে উৎসাহিত করা মানে তাদের প্রাকৃতিক বিস্ময়কে লালন করা এবং তাদের এই বড় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে সহায়তা করা। তাদের কাছে এমন প্রশ্নগুলো করুন, যেমন, "আপনি কী মনে করেন পৃথিবী এত সুন্দর কেন?" অথবা "আপনি কেন মনে করেন মানুষ একে অপরকে সাহায্য করে?" বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং চর্চা নিয়ে তাদের জানার সুযোগ দিন।

এই কৌতূহল তাদের আত্ম-অন্বেষণে সহায়তা করে এবং পৃথিবী সম্পর্কে গভীর চিন্তা করতে প্রেরণা দেয়। তাদের এমন একটি মনোভাব গড়ে ওঠে যা নিজস্ব বিশ্বাস গঠন করতে এবং নতুন নতুন প্রশ্ন ও উত্তরের সন্ধানে আগ্রহী হয়। আধ্যাত্মিক কৌতূহল তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং দুনিয়ার সাথে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে, যা তাদের আত্ম-অন্বেষণ ও আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।

ইসরাত

×