.
আমরা প্রায়ই বলে থাকি- আজ আমার মন ভালো নেই। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি হলেই অস্থির হয়ে যাই। কোনো কিছুতেই মন বসে না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমি ভালো আছি, আবার আমিও ভাবছি আপনি ভালো আছেন- জীবনটা তো এমনই। কারণ আপনার আমার ভেতরের খবর কেউ জানতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রকাশ না করি। আমরা যেমনই থাকি এক গাল হাসি নিয়েই জীবন পার করে দিতে হয়। আমাদের ভেতরের খবর কেউ জানবে না, কেউ বুঝবে না। আমাদের মন খারাপ, আমাদের কান্না, আমাদের কষ্ট- এগুলোর কখনো কেউ ভাগ নিতেও পারবে না। বড়জোর প্রিয় মানুষগুলো এসে কাঁধে হাত রেখে সান্ত¡না দিতে পারবে। এর থেকে বেশি কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এ পৃথিবীতে কারও কাছেই নেই। কারণ আমাদের হাসিগুলো সবার দৃষ্টি ছুঁতে পারলেও আমাদের কষ্টগুলো খুব গোপন এবং একান্তই আপন। তাই যার কষ্ট সে ছাড়া কষ্টের উপস্থিতি অন্য কেউ টের পায় না। মানুষ একা একা হাসতে পারে না, হাসতে হলেও একজন সঙ্গী প্রয়োজন হয়। কিন্তু মানুষের দুঃখ হলে একা একা কাঁদতে হয়। কারণ দুঃখের কেউ সঙ্গী থাকে না।
সেই কষ্টটা থেকে তাই নিজেকেই বেরিয়ে আসতে হয়। সেই কান্নাটা নিজেকেই মুছে নিতে হবে। কষ্ট, হতাশা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে মনের মধ্যে জং ধরে। সেখান থেকে বের হতে ভালো লাগার কাজগুলোতে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে, প্রিয় মানুষগুলোর সান্নিধ্যে থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটালে। ওদের সঙ্গে গল্প আর খেলা করলে মন অনেক হাল্কা হয়ে যায়। নামাজ পড়ুন, নামাজ মনকে প্রশান্ত করে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন, চোখের পলকে অনেকখানি সময় কেটে যাবে। রিক্সা করে ঘুরে বেড়ান। একা অথবা পছন্দের কাউকে নিয়ে প্রিয় কোনো জায়গায় ঘুরতে যান। কেউ রান্না করতে ভালোবাসলে নিজের বা প্রিয়জনের জন্য পছন্দের জিনিস রান্না করতে পারেন। ছাদে বা অন্য কোথাও গিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে পারেন। পছন্দের কোনো সিনেমা দেখুন অথবা গল্পের বই পড়ুন। হাসির কার্টুনও দেখতে পারেন। বৃষ্টি পছন্দ করলে অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন, যদি তাতে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না হয়।
মন অনেক বেশি অস্থির হলে কোনো কিছু ভালো লাগে না। কোথাও মন বসে না। তবু নিজেই নিজেকে মোটিভেট করে অন্যদিকে মন ঘুরাতে হয়। আপনার পাশের মানুষগুলো আপনাকে শুধু বুঝাতে পারবে, মন ভালো করার চেষ্টা করতে পারবে। কিন্তু মূল পদক্ষেপটা আপনাকেই নিতে হবে। ভাবুন তো একবার, আপনার পাশের মানুষগুলো আপনাকে কত ভালোবাসে! তারা কতভাবে চেষ্টা করছে আপনাকে ভালো রাখার! তাদের এই চেষ্টা আপনি বৃথা যেতে দেবেন? মনে রাখবেন, এই গোমট অন্ধকার অবস্থা থেকে আপনাকেই বের হতে হবে। বেরিয়ে আসুন, দু হাত মেলে আকাশপানে চেয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিন। দেখবেন নিজের অজান্তেই মন ভালো হতে শুরু করবে। মেঘ সরিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটবে। হাসিটা ধরে রাখুন।