ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

প্রিয় ফুল কদম অচেনা লাগছে

শুকিয়ে মলিন, সেই ঘ্রাণ আর নেই

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৬ আগস্ট ২০২৪

শুকিয়ে মলিন, সেই ঘ্রাণ আর নেই

বর্ষার শেষ বেলায় বিবর্ণ কদম

বর্ষার সঙ্গে কদম ফুলের যে সম্পর্ক সে তো কারও অজানা নয়। বাঙালি এ সম্পর্কটা বহুকাল আগে আবিষ্কার করেছিল। রবীন্দ্রনাথের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। কবিতায় গানে তিনি এ সম্পর্কের মাধুরী ব্যাখ্যা করেছেন। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান...।’ প্রকৃতির অকৃত্রিম দান বড় ভালোবেসে গ্রহণ করেছিলেন কবিগুরু। প্রিয় কদমের ফুল হাতে নিয়েই বর্ষা উদ্যাপন করেছেন তিনি।
ফুলপ্রেমীরাও বর্ষা এলে কদম গাছের দিকে চোখ তুলে তাকান। ফুলটি ফুটেছে কি না নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন। আবার গাছ ভর্তি ফুল দেখেও অনেকে বুঝে যান, শুরু হয়ে গেছে বর্ষার কাল। আষাঢ় ও শ্রাবণে বর্ষা বৃষ্টি কদম ফুল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
তবে এখন বিদায় বেলা। বহু কাঁদিয়ে বিদায় নিচ্ছে বর্ষা। অল্পস্বল্প বৃষ্টি হলেও চারপাশটা কেমন যেন রুক্ষ। শুষ্ক। গাছে থাকা কদমগুলো শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। আগের সেই ঘ্রাণ আর নেই। একে একে ঝরে পড়ছে সব ফুল।
ঢাকার রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেনে আছে কদম গাছ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও কম- বেশি দেখা যায়।

বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ঝিলের পাড়ে আছে। আর মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে তো আছেই। এখন অধিকাংশ গাছেই শুকনো ফুল। তবুও ফুলের দিকে তাকালে কানে বাজে: এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে, এসো করো স্নান নবধারা জলে...। আর সে জনপ্রিয় লোকসংগীতের কথা তো না উল্লেখ করলেই নয়, যেখানে প্রেয়সী কদম্ব তলে ছুটে আসতে মরিয়া। প্রেমিক পুরুষের জন্য আকুতি প্রকাশ করতে গিয়ে গ্রামীণ নারী গাইছে: প্রাণ সখিরে/ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে/বংশী বাজায় কে রে সখী/বংশী বাজায় কে/আমার মাথার বেণী বদল দেব/তারে আইনা দে...।
কদম গাছ দীর্ঘকায় বৃক্ষ। সরল কা- ওপরের দিকে বহুদূর পর্যন্ত উঠে যায়। শাখা-প্রশাখাও অনেক। এগুলো ভূমিভাগের সমান্তরালে প্রসারিত হয়। কদম ফুল দেখতে গোলাকার। ছোট টেনিস বলের মতো। মাংসল অংশটিকে আড়াল করে রাখে অপরূপ মঞ্জরি। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরিতে কমলা ও সাদা রং স্পষ্ট। ফুলের বৃন্ত সাদা। দল হলুদ। অবশ্য ফুলটিকে কদম নামে সবাই চিনলেও এর আছে আরও কিছু নাম।

বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প ও সুরভি নামে ডাকা হয়ে থাকে। কদমের পাতাও বেশ সুন্দর। বড় এবং কিছুটা ডিম্বাকৃতির। ঘন পাতার কারণে গাছের নিচটা ছায়াঘন ও সুশীতল থাকে।
কিন্তু এখন রোদ নেই। বৃষ্টি নেই। ছায়া নেই। ফুল নেই। অদ্ভুত এক সময়। বৈরী সময়ে কদমকে ঠিক কদমের মতো মনে হচ্ছে না!

×