আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে বপন শীর্ষক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম দেখছে দর্শনার্থীরা
পুরো প্রদর্শনালয় জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানা মাধ্যমের কাজ। দেওয়ালে ঝুলছে চিত্রকর্ম, মেঝেতে বিছিয়ে রাখা হয়েছে মাটি থেকে ধাতব পদার্থে গড়া ভাস্কর্য। শুধু কি তাই? রয়েছে স্থাপনাশিল্পও। এভাবেই বহুমাত্রিক শিল্পের সম্মিলনে সেজেছে শিল্পায়োজনটি। আর প্রতিটি শিল্পকর্মের সঙ্গে মিশে রয়েছে কৃষিজীবী জীবনের গল্প। সেই গল্পে রয়েছে কৃষকের আক্ষেপ থেকে হতাশার শিল্পিত বয়ান। উঠে এসেছে ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া অবহেলিত কৃষকের দুদর্শার চিত্র। জীবনমানের উন্নয়ন না হওয়ায় কৃষকের হৃদয়ের ক্ষত যেন ধরা দিয়েছে শিল্পের শরীরে। ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিযঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে চলমান এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বপন’।
ছয় শিল্পীর শিল্পের সমাহারে সেজেছে এই শিল্পায়োজন। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- আনিকা তাসনিম, বিপাশা হায়াত, জাফরিন গুলশান, গোলাম ফারুক সরকার, খন্দকার নাসির আহমেদ ও সুমনা আখতার। প্রদর্শনীর কিউরেট করেছেন গোলাম ফারুক সরকার।
শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ফ্রঁসোয়া ঘ্রোজঁ।
প্রদর্শনীটির মূল্যায়নে নিসার হোসেন বলেন, বহুমাত্রিক এই শিল্পায়োজনে উঠে এসেছে কৃষিজীবী জীবনের চেহারা। পাশাপাশি রয়েছে প্রকৃতি রক্ষার বারতা। অন্যদিকে প্রতিটি কাজেই রয়েছে আধুনিকতার ছাপ। শিল্প সৃজনে শিল্পীরা পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়েছেন। সে কারণেই তাদের শিল্পকর্মের মধ্যেও রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। ধান, গমসহ, নানা কৃষিপণ্য শিল্পকর্মে ঠাঁই করে নেওয়ার কারণেই দর্শকরা একাত্ম হতে পারছেন সহজেই।
লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতি হলেও বদলায়নি কৃষকের জীবন। শ্রমের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি। আবার দেশের শিল্প-সাহিত্যেও কৃষিজীবীদের আক্ষেপময় জীবনের করুণ গল্পের দেখা মেলে না। সেই সব বঞ্চিত কৃষকের জীবনের বেদনার্ত অধ্যায়কে ধারণ করেছে এই প্রদর্শনী। শিল্পীদের কাজের গভীরতা ধারণ করেছে সেই ক্ষতকে। সেই সুবাদে চিন্তাশীলতার প্রতিফলন ঘটেছে প্রতিটি কাজে।
কিউরেটর ও শিল্পী গোলাম ফারুক সরকার বলেন, বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক মানুষ কৃষি পেশায় নিয়োজিত। তারা সমগ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য জোগানোর ভার বহন করেন। এই প্রদর্শনী সেই কৃষক ও কৃষির মূল্যায়ন সম্পর্কে জনসচেতনতা প্রত্যাশা করে; অন্বেষণ করে এর অন্তর্গত নানান স্তর। দর্শন, অনুভূতি ও কলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচলিত ব্যবস্থাপনার গভীরে আলোকপাত করে পুনরায় সংলাপের সূত্রপাত করতে শিল্পীদের এই সম্মিলিত সৃষ্টিশীল প্রয়াস। কাপড়, জুট, আলোকচিত্র, পেইন্টিং, বেত পণ্য, জল রং, ধানসহ মিশ্র উপাদান দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বহুমাত্রিক প্রদর্শনী। বিভিন্ন প্রকাশ রূপ ও মাধমের ভিন্ন ব্যাকরণ এই প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ছয় শিল্পীর উপস্থাপিত ভিন্ন রকম শিল্পমাধ্যম ও ধরনে সৃষ্ট এসব শিল্পকর্ম দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মাটি, পানি ও পরিবেশ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি করবে।
সব মিলিয়ে ৫০টি শিল্পকর্মের সম্মিলন ঘটেছে প্রদর্শনীতে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।