ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

‘ব্যাট গ্রাম’

কুটির শিল্পে বদলে গেছে একটি জনপদ

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

কুটির শিল্পে বদলে গেছে একটি জনপদ

যশোরের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে কারখানায় ব্যাট তৈরি করছেন এক কারিগর

যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া। এ গ্রামকে সবাই এখন ‘ব্যাট গ্রাম’ নামেই চেনেন। এক ব্যাট  তৈরির কুটির শিল্প বদলে দিয়েছে গ্রামটিকে। আড়াই যুগ আগেও এ গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ছিল বেশ করুণ। তবে এই সময়ে গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ব্যাট  তৈরির কারখানা। যেখানে সৃষ্টি হয়েছে ৪০০-৫০০  লোকের কর্মসংস্থান। এসব কারখানায় প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার ব্যাট তৈরি হচ্ছে। যার গুণগত মানও প্রশংসনীয়। ব্যাটের মান ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে  দেশের সব জেলাতেই। প্রতিদিন যশোর থেকে পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কারিগরদের কাছ থেকে ব্যাট সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। 
কারিগররা জানান, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম স্থানীয় সঞ্জিত রায় নামে এক কাঠমিস্ত্রি ব্যাট  তৈরি শুরু করেন। এর পর তার দেখাদেখি প্রতিবেশীরাও তার কাছ থেকে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে গ্রামে ব্যাট  তৈরির কারিগরের সংখ্যা অর্ধশতাধিকে এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাট  তৈরিতে কদম, জীবন, নিম, গুল্টে (পিটুলি), পুয়ো, ছাতিয়ান, ডেওয়া কাঠ ব্যবহার করা হয়। ভালোমানের ব্যাট  তৈরি করতে নিম ও জীবন কাঠ বেশি ব্যবহার হয়। প্রকারভেদে ব্যাটপ্রতি খরচ হয় ২০-১৫০ টাকা। পাইকারি বিক্রি হয় ৩০-২৫০ টাকা। ব্যাট  তৈরি করতে কারিগরদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও সাহায্য করে থাকে। শরিফুল নামে এক কারিগর বলেন, ব্যাট  তৈরির পেশায় এসে আগের থেকে মোটামুটি সচ্ছল আমরা।
সুধীর নামে আরেক কারিগর বলেন, ক্রিকেট ব্যাট  তৈরির কারখানা হওয়ায় গ্রামের মানুষ অন্ধকার থেকে আলো দেখছে। এ পেশার কারিগররা করোনার সময় অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে। কারিগররা জানান, ব্যাট  তৈরির কারুকাজ তাদের  নখদর্পনে, কিন্তু আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট  তৈরিতে যে পুঁজি দরকার তা তাদের নেই। এ ছাড়া জরুরি কাঠ বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারলে দেশেই বিশ্বমানের ব্যাট  তৈরি সম্ভব। এ জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা সরিকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজর দিলে বিষয়টি আরও সহজ হবে।
রতন নামে এক কারিগর বলেন, আমাদের পুঁজি কম, মাল কিনতে হয় কম, বাকিতে মাল কিনলে লস হয়ে যায়। সরকার থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পেলে আমরা এ শিল্পের পরিধি বাড়িয়ে আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট  তৈরি করতে পারব। বিসিক যশোর কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গোলাম হাফিজ বলেন, কুটির শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাট  তৈরি কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য এ কাজে জড়িত কারিগররা বিসিকের শরণাপন্ন হলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ, আর্থিক সহযোগিতাসহ সব রকমের ব্যবস্থা করা হবে।
 

×