
প্রখ্যাত শিল্পী যামিনী রায়ের পটচিত্রে শারদ উৎসবের বর্ণিল উপস্থাপনা
শরৎ অনেক আগেই এসেছে। এখন অপেক্ষা শারদ উৎসবের। না, খুব বেশি দিনের অপেক্ষা নয়। আর মাত্র কদিন পর বর্ণিল উদ্যাপন শুরু হয়ে যাবে। শারদীয় দুর্গোৎসবে মাতবে গোটা দেশ। বাইরেরটা দেখে অত বোঝা যাচ্ছে না বটে। ভেতরে ভেতরে চলছে জোর প্রস্তুতি।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা এদিন শুরু হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে ঠাকুর দেখা। দলবেঁধে একেক দিন একেক এলাকার পূজা দেখতে যাবেন ভক্তরা। ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি ম-পগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংগীত নৃত্যসহ নানা পরিবেশনায় ছড়িয়ে পড়বে উৎসবের রং। ম-পের বাইরে ফুটপাতে ফাঁকা জায়গায় ছোট খাটো মেলার আয়োজন করা হবে।
মেলায় লোক ও কারুশিল্পের উপস্থাপনা চোখে পড়বে। মুড়ি-মোয়া-নাড়ুর পসরা বসবে। যাত্রাপালারও প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে বর্ণিল উৎসবের অপেক্ষা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার/উৎসব সবার।’ বাঙালিত্বের বোধ নিয়ে সবাই, সব ধর্ম বর্ণের মানুষ যোগ দেবেন উৎসবে। দশমীর দিন ২৪ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদ উৎসব।
আপাত দেবী দুর্গার আগমনের অপেক্ষা। কৈলাশ থেকে পিতৃগৃহে আসছেন উমা আনন্দময়ী। পঞ্জিকা মতে, এবার বাহন হিসেবে ঘোড়াকে বেছে নিয়েছেন তিনি। ঘোড়ায় চড়ে আসছেন। ১৪ অক্টোবর মহালয়া, অর্থাৎ, পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের সূচনা হবে। এভাবে বিভিন্ন ধাপে চূড়ান্ত রূপ পাবে উৎসব।
প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবকে বর্ণিল ও আনন্দঘন করে তুলতে বিপুল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর মোট পূজাম-পের সংখ্যা হতে পারে ৩২ হাজার ৪০৭টি। গত বছর দুর্গাপূজায় ম-প ছিল ৩২ হাজার ১৬৮টি। সে অনুযায়ী নতুন ২৩৯টি পূজা ম-প উৎসবে যুক্ত হবে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে সবমিলিয়ে কতটি ম-প হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আরও কয়েকদিন পর সংখ্যাটা নিশ্চিত করে বলা যাবে। তবে প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। এরই মাঝে ঢাকার অনেক এলাকায় ম-প নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এবারও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ম-প নির্মাণ করা হবে বনানী মাঠে। খামারবাড়ি, কলাবাগানেও প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। এসবের বাইরে জাতীয়ভাবে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানেও চলছে নানা কাজকর্ম।
তবে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিপর্বটা সবচেয়ে ভালো দেখা যায় পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে। সেখানে চলছে জমজমাট কেনাকাটা। বিভিন্ন ঘরে প্রতিমা তৈরির কাজ হচ্ছে। আগে থেকে অর্ডার নিয়ে মাটির প্রতিমা বানাচ্ছেন শিল্পীরা। পূজার আগে এসব প্রতিমা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। প্রতিমা সাজাতে যত যা প্রয়োজন হয়, সবই পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। প্রতিমার শাড়ি গহনা ঘন কালো চুল- সবই বিক্রি হচ্ছে শাঁখারি বাজারে। পূজার সময় বিবাহিত নারীরা হাতে শাঁখা পরেন। সে কথা মাথায় রেখে কাজ করছেন শাঁখারিরা।
এর বাইরে ঢাকার মার্কেট ও শপিংমলে চলছে বহুবিদ কেনাকাটা। বিশেষ করে নতুন জামা জুতা শাড়ি পাঞ্জাবি কিনতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, দেবী দুর্গা যেমন ঘোড়ায় চড়ে আসছেন, ফিরেও যাবেন ঘোড়ায়। শাস্ত্র আবার বলছে, দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হওয়া শুভ নয়। ঘোড়ায় আগমন সাধারণত ছত্রভঙ্গের ইঙ্গিত দেয়। গমনও হবে ঘোড়ায় চড়ে। এর ফলে যুদ্ধ অশান্তি আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা আছে বলে বিশ্বাসীরা মনে করছেন। তাছাড়া সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে সজাগ থাকতে হবে। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয় নিশ্চিত করতে হবে। যেন এ কথা আমরা ভুলে না যাই।