লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে মৃত্তিকার মোহে শীর্ষক প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন এক দর্শনার্থী
শিল্পকর্ম সৃজনে চারপাশের চেনা জগতকে নিবিড়ভাবে অবলোকন করেছেন চিত্রশিল্পী কারু তিতাস। সেই সুবাদে রং-তুলির আঁচড়ে জীবন ও প্রকৃতির জয়গান গেয়েছেন এই চিত্রকর। বিন্যাসের সঙ্গে বর্ণের নিপুণ প্রয়োগে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন নিসর্গ ও জীবনের আখ্যান। জীবনের সেই শিল্পিত ধারাভাষ্যে ধরা দিয়েছে নগর থেকে গ্রামীণ জীবন।
তেমনই এক ছবিতে মাটির সড়কের দুই ধারে বিস্তৃত হওয়া কোলাহলময় হাটের দৃশ্যকল্প উঠে এসেছে। হাটকে ঘিরে অগণন মানুষের উপস্থিতি চিত্রকর্মটিতের প্রাণের সঞ্চার করেছে। ফসলের মাঠ ধরে হেটে চলা কৃষিজীবী মানুষ কিংবা নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকায় ভেসে বেড়ানো জেলেদের যাপিত জীবনের ছবি এঁকেছেন শিল্পী।
চিত্রণের কৌশলে রহস্যময়তায় উন্মোচিত হয়েছে ধানের খেতে রৌদ্রছায়ার খেলা। তিতাসের ক্যানভাস থেকে বাদ যায়নি কারখানার শ্রমিক কিংবা পিচঢালা সড়কে জীবনের চাকা ঘোরানো রিক্সাচালকের জীবনচিত্র। অন্যদিকে বান্দরবানের গহিন অরণ্যের নান্দনিক নিসর্গ থেকে পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার রূপময়তার ছবিগুলো শিল্পরসিকের নয়নে ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তির পরশ। চিত্রকর্মগুলো ঝুলছে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ২/৮নং ঠিকানার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে। এখানে চলছে মৃত্তিকার মোহে শীর্ষক প্রদর্শনী।
নিজের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে কারু তিতাস বলেন, আমি ট্রেনে করে ঘুরে বেড়াই। রেলের জানালা দিয়ে আমি ক্যানভাসের আদলে বাংলাদেশকে দেখি। কত শতবার যে আমি অচেনা স্টেশনে নেমে গেছি। অচেনা মানুষদের সঙ্গে দিনের পরদিন কাটিয়েছি। অচেনা অজানা এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছি। সেইসব মানুষ, স্থান, স্মৃতিময় দিনগুলোই আমার ক্যানভাসে উঠে এসেছে। তাই বাংলাদেশের পথে-ঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া মানুষ ও জীবনের গল্প ধরা দিয়েছে আমার ক্যানভাসে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, কারু তিতাসের প্রতিটি ক্যানভাস যেন হয়ে উঠেছে জীবন ও প্রকৃতিসংলগ্ন একেকটি গল্প। চিত্রকর্ম সৃজনের করণকৌশলে আটপৌরে জীবনও রহস্যময়তায় উপস্থাপিত হয়েছে।