ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২১:২২, ৪ জুন ২০২৩

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ

.

রসে ভরা মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। এই মাস বা সময়ের জন্য সারা বছরই থাকে সবার অপেক্ষা। মাসে পাওয়া যায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, তরমুজ, তালশাঁসসহ নানা ধরনের রসাল ফল। মিষ্টি ফলের ঘ্রাণে ভরপুর থাকে বাজার। এসব ফল খেলে পেট, মন দুটোই ভরে। রসনা যেমন হয়, সৌন্দর্যচর্চাও হয়। সেটা ফল খেয়েই হোক আর ফল মেখেই হোক। গ্রীষ্মকাল মানেই তীব্র গরম। তার মাঝেই স্বস্তি মেলে রসে ভরা নানা রকম ফলের সমাহার দেখে। যদিও এখন সারা বছরই প্রায় সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। তবু সময়ের ফলের স্বাদই আলাদা। এসব মৌসুমি ফলের সমাহার থাকে প্রায় গ্রীষ্ম-বর্ষাজুড়ে। এসবের যেমন রয়েছে বিভিন্ন ধরন, তেমনি রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ।

আম: আম পছন্দ করে না এমন মানুষ মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলের রাজা আম। সামান্য একটু বড় হতেই আম খাওয়া শুরু হয়। কাঁচা আম মরিচ, লবণ দিয়ে মাখিয়ে ভর্তা সবার পছন্দ। আর পাকা মিষ্টি আমের তো কোনো তুলনাই নেই। আমের রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতি। ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ফজলি থেকে শুরু করে নানা জাতের নানা স্বাদের আম। এসব আমের আছে নানা গুণাবলী। কাঁচা আম ভিটামিনসি’- ভরপুর। আবার পাকা আমে রয়েছে ফাইবার, পেকটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। যারা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ে চিন্তিত, তারা আম প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। আমে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা স্তন কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। লিউকোমিয়া প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। দেশের সর্বত্রই আম গাছ রয়েছে। তবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম পছন্দের শীর্ষে। আমের রাজধানী বলা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। কিছু আম দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে।

কাঁঠাল: বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। অন্যদিকে অ্যাজমা, কাশি কিংবা সর্দির ক্ষেত্রেও কাঁঠাল বেশ উপকারী। কাঁঠালে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন , সি, বি-, বি-, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে . গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম কাঁঠালের বীজে . গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। যা দেহ গঠনে সহায়ক। পাকা কাঁঠালে . গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে . গ্রাম কাঁঠালের বীজে . গ্রাম শ্বেতসার রয়েছে। কাঁঠালের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চোখের রেটিনার ক্ষতি প্রতিরোধ করে। কাঁঠাল হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিহত করে। পাকা কাঁঠালের পাশাপাশি বর্তমানে কাঁচা কাঁঠালের ব্যবহারও বেড়েছে। অনেকেই মাংসের সঙ্গে তরকারি হিসেবে কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খায়। আবার তেঁতুল আর শুকনা মরিচ দিয়ে কাঁঠালের মুচির ভর্তার কোনো তুলনা নেই। পান্তা ভাতের সঙ্গে নরম পাকা কাঁঠাল বাঙালির প্রিয় খাবার। কাঁঠালের রসের পিঠাও খুব মজার। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, টাঙ্গাইল চট্টগ্রামে প্রচুর কাঁঠাল জন্মে। তবে ময়মনসিংহে কাঁঠাল সবচেয়ে বেশি জন্মায়।

লিচু: কাঁটার মতো শক্ত খোসার আবরণে ঢাকা মিষ্টি নরম মাংসালো ফল লিচু। রসে ভরপুর। যে কোনো বয়সের মানুষেরই পছন্দের ফল লিচু। লিচুতে ক্যালরির পরিমাণ কম। এতে রয়েছে প্রচুর মিনারেল ভিটামিন। ৪০ গ্রাম বা বড় আকারের ৬টি লিচু ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন। লিচু রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ায়। অবশ্য সুস্থ মানুষেরও বেশি লিচু খাওয়া ঠিক নয় লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। তাই খালি পেটে শিশুরা তো অবশ্যই, বড়রাও বেশি লিচু খাবেন না। লিচু উৎপাদনে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা চায়না- জাতের লিচু বেশি জনপ্রিয়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসিআর অ্যান্টি অক্সিজেন যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের মতো রোগ বাসা বাঁধতে প্রতিরোধ করে। ছাড়া লিচুতে আছে বিটা ক্যারোটিন এবং নিয়াসিন থায়ামিন। যা চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে বেশ সহায়তা করে। রাজশাহী এবং দিনাজপুরের লিচু সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

জাম: ছোটবেলায় জাম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতাম, পাখি কখন খেতে গিয়ে টুপ করে একটি জাম নিচে ফেলবে। সেই জাম নিয়ে চলত বেজায় কাড়াকাড়ি। মরিচ, লবণ দিয়ে বাটিতে ঢেকে জাম ঝাঁকিয়ে খাওয়ার স্বাদ অতুলনীয়। গ্রীষ্মকালীন ফল জামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসি’, জিঙ্ক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট স্যালিলাইলেট ইত্যাদি। জাম আকারে ছোট। কিন্তু এর গাছ বিশাল। থোকায় থোকায় ধরে থাকে। জামে শর্করার পরিমাণ থাকে প্রায় ১৫.৫৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ গ্রাম। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি জাম হয়।

সময় বারবার মনে হয় পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের সেই বিখ্যাত কবিতা- ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই/ ফুলের মালা গলায় দিয়ে/ মামার বাড়ি যাই/ ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ/ পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।

×