ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের নগরী হবে ঢাকা

বর্ণিল পহেলা বৈশাখের অপেক্ষা

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ০০:১০, ২ এপ্রিল ২০২৩

বর্ণিল পহেলা বৈশাখের অপেক্ষা

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চলছে ব্লকের কাজ

কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন, পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে এবার ভাটা পড়বে। রোজার মধ্যে অভুক্ত অবস্থায় বর্ষবরণ, ক’জন আর ঘর থেকে বের হবে? তবে বাস্তবে শুধু বের হওয়া নয়, ঢল নামবে মানুষের। কিছুদিন ধরে চলা প্রস্তুতি পর্ব যেন সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। একটু নীরবে হলেও, প্রস্তুতি থেমে নেই। আনন্দের এত বড় উপলক্ষ হেলায় হারাতে চান না উৎসবপ্রেমীরা। তাছাড়া পহেলা বৈশাখ শুধু তো উৎসব নয়, বাঙালিত্বের বোধ নিয়ে নতুন করে জেগে ওঠার মহড়া। এবারও গোটা দেশে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। তবে মূল দৃষ্টি থাকবে ঢাকার দিকেই। 
সেই ষাটের দশকে ঢাকায় নাগরিক বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট। তখন পাকিস্তানিরা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। উদার অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষেরা, বিশেষ করে শিল্পী সমাজ তাতে ফুঁসে ওঠে। সে প্রতিবাদেরই অংশ ছিল রমনা বটমূলের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এখনো আয়োজনটির মধ্য দিয়ে বাঙালির লোকায়ত জীবন ও উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মৌল চাওয়াগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অভিন্ন চেতনার জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করে আসছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। বর্ণিল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির মঙ্গল কামনা করা হয়। ফলে এ উদ্যাপন থেকে সরে আসা যায় না। গত বছরও ঈদের আগে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে মেতেছিল বাঙালি। সে অভিজ্ঞতায় এবার আরও বর্ণিল উৎসব হবে বলে আশা। ছায়ানট ও চারুকলা অনুষদ সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রস্তুতি পর্ব দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে বর্ণিল হয়ে উঠবে বর্ষবরণ উৎসব। নাগরিকরাও অপেক্ষা করে আছেন। বছরের প্রথম দিনটি ছায়ানটের সঙ্গেই শুরু করতে চান তারা। ভোরে রমনা বটমূলে সমবেত হয়ে গান শুনতে চান। মঞ্চের শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে চান। আর তার পর যোগ দিতে চান চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এখন সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। বৈশাখকে রঙিন করে তুলতে বিভিন্ন কেনাকাটা করছেন তারা। ঈদের প্রস্তুতির মধ্যেই খুঁজে নিচ্ছেন দেশী তাঁতের শাড়ি বা কাচের চুরি। ছেলেরা আলাদা করে পাঞ্জাবি কিনছেন।

উভয়ের পোশাকে থাকছে লাল ও সাদা রঙের প্রাধান্য। বিষয়টি জানা আছে ফ্যাশন ডিজাইনারদেরও। তারাও পহেলা বৈশাখের জন্য লাল সাদা রঙের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত এখন। দেশীয় পোশাকের দোকানগুলোতে শাড়ি পাঞ্জাবির পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখের থ্রি পিস, ফতুয়া ও টি শার্ট। ঈদের কেনাকাটার ফাঁকে বৈশাখের প্রথম দিন পরার জন্য জামা কাপড় কিনতে দেখা যাচ্ছে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের ‘দেশী দশ’ বৈশাখের পোশাকের জন্য আলাদা পরিচিতি লাভ করেছে। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দশটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রতিটিতেই আছে বৈশাখের নতুন পোশাক। ফোক মোটিভ প্রাধান্য পেয়েছে পোশাকে। 
রাজধানীর ফুটপাতেও দৃশ্যমান হচ্ছে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি। হাইকোর্ট মাজার এলাকা সংশ্লিষ্ট মৃৎশিল্প মার্কেট এখন জমজমাট। লোক ঐতিহ্যের নানা পণ্য এখানে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতার উপস্থিতিতেও চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে বর্ণিল পহেলা বৈশাখের অপেক্ষা।

×