ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকরী

ড্রাগন পুষ্টিগুণে ভরা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ও মোঃ মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৫ আগস্ট ২০২২; আপডেট: ১০:৫৬, ৬ আগস্ট ২০২২

ড্রাগন পুষ্টিগুণে ভরা

.


ঔষধি ও পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ বিদেশী ফল ড্রাগন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফলতা পেতে শুরু করেছেন আলমাস উদ্দিন নামের এক শৌখিন ব্যবসায়ীতার ৮০ শতকের ড্রাগন বাগানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছের প্রতিটিতে এখন শোভা পাচ্ছে লাল ও হলুদ ড্রাগন ফল

সহজ পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং রোগ-বালাই কম ও বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদা থাকায় বিদেশী এ ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এলাকার অন্য শৌখিন কৃষকরাড্রাগন বাগানটির অবস্থান গৌরনদী উপজেলার আধুনা বটতলা এলাকায়ড্রাগন বাগানে পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা সুজন হোসেন বলেন, বিগত দেড় বছর পূর্বে ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আলমাস উদ্দিন তার (আলমাস) শ্বশুরের আধুনা বটতলা এলাকার পরিত্যক্ত উঁচু ৮০ শতক জমিতে পাঁচ হাজার ড্রাগন চারা রোপণ করেনএতে তাদের গ্রামের তিনজনের কর্মসংস্থান হয়েছেসঠিকভাবে পরিচর্যার পর চলতি বছর প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণ ড্রাগন ফল ধরেছেশৌখিন ব্যবসায়ী ও ড্রাগন বাগানের মালিক আলমাস উদ্দিন বলেন, ব্যবসার কাজে চীনে গিয়ে সেখানে প্রথম ড্রাগন চাষ দেখে আমি উসাহিত হই

পরবর্তীতে শখের বশে লাল, হলুদ ও সাদা তিন প্রকারে ড্রাগন চারা সংগ্রহ করিওই চারাগুলো শ্বশুরের পরিত্যক্ত ৮০ শতক জমির ওপর বেড তৈরি করে রোপণ করিতিনি আরও বলেন, বেড তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও গাছের পরিচর্যায় এ যাবত প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছেচলতি বছরের এপ্রিল মাসে ড্রাগন বাগানের প্রতিটি গাছে ফুল আসতে শুরু করে, পরবর্তীতে প্রচুর পরিমাণ ড্রাগন ফল ধরেছেপর্যায়ক্রমে এর ফলন বৃদ্ধি পাবেআলমাস উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে বাগানের ড্রাগন ফল বাজারজাত করা শুরু হয়েছেবর্তমানে বাজারে মৌসুমী ফলে ভরপুর থাকায় প্রতিকেজি ড্রাগন পাইকারি ৩০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছেগৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, ড্রাগন বিদেশী ফল হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে ড্রাগনের চাষ শুরু হয়েছেপুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ রয়েছেতিনি আরও বলেন, একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালোরিশক্তি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো এ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছেডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকরী

প্রবাসী সাফল্য

ড্রাগন ফলকয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানত এটি বিদেশী ফলকিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশী ফল বলেও পরিচিতহবিগঞ্জেও ড্রাগনের চাষ হচ্ছেবর্তমানে জেলার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চলছেদেওয়া হচ্ছে উসাহএতে কৃষকরা ফলটি চাষে মনোযোগী হচ্ছেনইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি স্থানে চাষ শুরু হয়েছেযারাই এ ফলটি চাষ করেছেন, সবাই সফল

প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়সঠিক পরিচর্যায় প্রতিটি গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ভাল ফলন দেবেজেলা কৃষি বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছেজানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মানিক ভান্ডার গ্রামের বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী জহুর হোসেনকৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের ১৩ জুন প্রায় ২৫২ শতক জমিতে গড়ে তোলেন শখের ড্রাগন ফলের বাগানএ বাগানের নাম দেন মনোয়ারা জহুর এগ্রো ফার্মপাহাড়ী এলাকায় স্থাপিত এ বাগানে রোপণ করেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ড্রাগন গাছের চারাএ পর্যন্ত চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ টাকা

বর্তমানে গাছে গাছে ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছেবাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ড্রাগন লতানো কাঁটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোন পাতা নেইগাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতোড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়ণ হয়ে ফুল ফোটেফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ণ ত্বরান্বিত করেচুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাহিদুল ইসলাম বলেন, মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নবেম্বর মাসেফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়নবেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকেএক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকেএকটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়

সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভবহবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আশেক পারভেজ বলেন, জহুর হোসেনের বাগানের চাষের সফলতা দেখে ড্রাগন ফলের চাষ করতে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে অন্যান্য কৃষকের মাঝেকৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে আছেপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে


 

×