দু’হাজার একুশের ফেলে আসা গান
সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী
‘এক্টু খানি শ্যামল ঘেরা কুটিরে তার স্বপ্ন শত শত’
= হেলে পড়া পৌষালি সূর্য্য, চোখে ছানি, বড্ড
ক্লান্ত! অদৃশ্য
গ্রামোফোন থেকে ছিটকে আসা
হিজ মাস্টার্স ভয়েসের কণ্ঠ,
হারিয়ে যাওয়া দূরাগত
স্বপ্নের সুর,
খ--বিখ-, ছিন্নভিন্ন!
আটাত্তর আরপিএমের
কাটা রেকর্ডে ক্ষয়িষ্ণু পিন
আটকে গেছে,
ব্যাঙের মতো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করে
চলেছে
‘ডাকিনী যোগিনী এলো শত নাগিনী,
এলো পিশাচেরা এলোরে’
০২/
আমার তালশাখার দোদুল্যমান বাবুই কুটিরে
দমকা হাওয়ার ছোবল।
বঙ্গের দক্ষিণে নাকি নিম্নচাপ, কবির কলমে পূর্বাভাস!
কাবিতা কিংবা গান কখনো মিথ্যে বলে না!
০৩/
আর এই দিকে ওই একটু দূরেই দিগন্তে পালালো
অস্তগামী সূর্যের ক্ষীণ রেখা,
কুয়াশা ঢাকা
ম্রিয়মাণ হাঁসুলি-বাঁকের ঠোঁট,
ঐ খানে ওই তো এক ছায়ার হাতছানি,
হন্য হয়ে অন্বেষণে স্ব-ভূমের পংগপালের ঝাঁক!
টুকরো টুকরো মেঘের শাখে সন্ধ্যার ঝুলন্ত বাদুড় লণ্ঠনে বিভ্রান্তির
মরীচিকা।
ছেঁড়া সুতো ধর্ষিতা নদী, মৃত-প্রায় কেঁচো,
একটুকরো
প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো লেপটে আছে।
পিচ্ছিল নগ্ন কাদা-মাখা উদার পাথার জল শূন্য,
পোড়-খাওয়া হাঁ করে থাকা খাল-বিল-জলা,
কাক-পাখি-পানকৌড়ির
পিপাসা মেটে না।
কারেন্ট জালের ফাঁকে মাছের আর্তনাদ
নিথর শৈবাল, সবুজ বিবর্ণ, মাথায় কৃষ্ণ-টুপি,
লজ্জায় মাথা নত করে কাতরাচ্ছে!
নিরেট পলির পোড়া মাটি থেকে
প্রত্যুত্তর হয়ে ফিরে আসা প্রতিধ্বনি!
০৪/
খবঃ ঁং মড় ঃযবহ, ুড়ঁ ধহফ ও
ডযবহ ঃযব বাবহরহম রং ংঢ়ৎবধফ ড়ঁঃ ধমধরহংঃ ঃযব ংশু
খরশব ধ ঢ়ধঃরবহঃ বঃযবৎরুবফ ঁঢ়ড়হ ধ ঃধনষব
এ্যাম্বুলেন্স,
স্ট্রেচার অক্সিমিটার সিলিন্ডার
ইন্টেনসিভ চুম্বন,
সমস্ত রাস্তা
জুড়ে কিলবিল অনাবিল জ্যাম,
রুদ্ধ সব
বেরুবার পথ!
খ্যাপা
পাগল মাথা কুটে খুঁজে মরে
নূড়ি পাথর শৈবাল
প্রবাল আর ফসিলের
প্রবল প্রহরা ভেদ করে ছায়ার
গায়েবি কায়ায় সেই ছায়া
নলখাগড়ার শ্যেন-চক্ষু দূরবীন
নিশ্চল
চোখের তারায়।
বাংলার
জাংলায় নুয়ে পড়া
কুমড়ো
ফুলের বিবর্ণ পাপড়িতে ফাংগাস,
স্যাঁতসেঁতে করুণ
কাব্যে নবতর নহবত
শাণিত সানাই-এর চিৎকার,
অবিশ্রান্ত ঘাণির ঘূর্ণেন বেদনার
ঘর্ম-সিক্ত রক্ত চুয়ানি।
০৫/
কর্নকুহরে নব প্রজন্মের কবির প্রলাপ শুনি,
চুল
তার কবেকার নেতিয়ে পড়া
বট-বৃক্ষের
জটায় জটায়ুর ঝুরি,
পলক-পাখার প্রজাপতি পাখ-
ভাঙ্গা,
কুয়াশার কাফনে ঢাকা কপালের বলিরেখা
শুকনো কাঠের বুক চিরে বিমূর্ত কারুকার্য,
মুখজুড়ে
লেপটে আছে আছে চৈত্র-খরা,
ব্যর্থ সব ত্বকের বিজ্ঞাপন!
তিতাসের
শ্বাস নেই, মঞ্চের পাদ- প্রদীপ নিভু নিভু,
আশঙ্কায় জড়সড়!
অডিওতে
নৈশব্দের শব্দ গুমরে কাঁদে
মঙ্গলের আশায় আকাশ চুম্বন করা
শঙ্খ-নাদ।
মনের গহিনে ডুবুরী নামার নোঙরে জং ধরেছে,
শেকলের কর্কশ
কাংস্য- ধ্বনি,
মারফতি বয়ানের
মারপ্যাঁচে হাঁসফাঁস কণ্ঠনালী,
মাইক্রোফোনে থুৎকার, উদবমনের কটুগন্ধ।
ঘূণে ধরা ফাঁসির নাগর দোলায়
সাগরের ঝড়
শেষে সোনাদিয়া চরে ঝুলে থাকা বেয়াব্রু লাশ
নারিকেলের বিদ্ধস্ত ডানায় দিচ্ছে
হাভাতে খবর-পাতার আনন্দ খোরাক।
কে কোথায় চাপা পড়লো, কে জানে,
কিভাবে মিলাবো বলো খসে পড়া চুলের হিসেব!
০৬/
সাগরে পালাবো?,
জানি মহীসোপান ধরে লোনা সমুদ্রে
অনেক অনেক দূর হেঁটে
যেতে পারি
সৈকতের জনসমুদ্রের ঘিঞ্জি ঠেলে!
কিন্তু এও জানি ভোগবাদী বিলাসীর বর্জ্য,
উদবমন, ন্যাপি, স্যানিটারি ট্র্যাশ
ঢেউয়ের
পরতে লেপটে আছে,
দুলছে শত নাগিনীর
উদ্ধত উদ্যত ফনা।
ঐতো দেখছি হিংস্র হাংগরের হাতছানি,
দাঁতে দাঁত নষ্ট- হাসি লাস্যময়ী সাইরেন,
উদাম নৃত্য, সফেদ কফনের ফেনায় ঢাকা
নোনা-স্তন-বৃন্ত
বয়ায় ভর করা ভাসমান ফুটন্ত মাইন!
০৭/
পালাবো কোথায়? কোথায় আশ্রয়?
রোহিংগার
আশ্রমে রক্ত বন্যা!
০৮/
তবুও আশায় থাকি, মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারা
অন্ধকারে আলপথ হেঁটে হয়ে
যাবে রাত্রি শেষে
প্রভাতের শুকতারা॥
(*মন্থর সন্ধ্যা,
ডিসেম্বর ৩১, দুহাজার একুশ, সম্মুখে ফানুশের রাত)
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: