ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারকদের বসন্ত! আবু ফারুক

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ করোনাকালের প্রতারক

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৩০ জুলাই ২০২০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ করোনাকালের প্রতারক

কথায় আছে, ‘কারো ঘর পোড়ে, আর সুযোগসন্ধানীরা সেই আগুনে আলু পুড়িয়ে খায়।’ আমাদের স্বাস্থ্য খাতেও এখন সুযোগসন্ধানী প্রতারকদের রমরমা বাণিজ্য চলছে। চলমান করোনা মহামারী তথা জাতীয় দুর্যোগে ফুটপাথ থেকে শুরু করে খোদ সরকারী হাসপাতাল এবং অধিদফতর পর্যন্ত প্রতারণা ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব, হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, অক্সিজেন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীসহ নানা সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতায় সরকার ও সংশ্লিষ্টরা প্রতিষেধকহীন অদৃশ্য শত্রু করোনার সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধে ব্যস্ত হলেও প্রায় সব বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক নীরবই ছিল। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের মতো মারাত্মক সব অপরাধ ও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে কতিপয় হাসপাতাল ও ব্যক্তি। মহাপ্রতারক সাহেদ ও চিকিৎসক সাবরিনা-আরিফদের অভিনব সব প্রতারণার গল্প দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। চাপে পড়ে যান রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। প্রতারণার শুরুটা হয়েছিল কেএন-৯৫ মাস্কের নামে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ দিয়ে। অন্যদিকে, স্থানীয় বাজারে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর সঙ্কটের সুযোগে একশ্রেণীর প্রতারক চক্র অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের পাশাপাশি শুরু করে নকল ও মানহীন সুরক্ষা সামগ্রীর অবৈধ কারবার। সিংহভাগ সাধারণ মানুষ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যাচাই-বাছাই না করেই এসব নকল ও নিম্নমানের সামগ্রী কিনে ব্যবহার করেন। যার পরিণতিতে সংক্রমণের বিস্তার কমে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যবহারকারীদের শরীরে এসব সামগ্রীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর্থিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মাঠপর্যায়ে তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করে কিংবা প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও এখনও থেমে নেই প্রতারকদের অনৈতিক কার্যক্রম। অন্যদিকে ধর্মান্ধ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে কতিপয় প্রতারক করোনা নির্মূলের প্রতিষেধক হিসেবে তাবিজ ও স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের পসরা সাজিয়ে বসে। অনেকেই তাদের প্রতারণার জালে আটকা পড়েছেন। তবু গ্রাম পর্যায়ে থেমে নেই এসব প্রতারণামূলক কর্মকা-। এককথায়, কোভিড-১৯ আমাদের জীবন ও জীবিকাকে যতটা না স্থবির করেছে তার চেয়েও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নানা শ্রেণীর প্রতারকদের সীমাহীন দুর্নীতি ও প্রতারণায়। স্বাস্থ্য খাতের স্বাস্থ্যই আজ পুরো বিষে ভরা। মুক্তির একমাত্র উপায় প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যের সব দুর্নীতিবাজ ও প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে বিষবৃক্ষের মূল উৎপাটন করা। নকল ও মানহীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুত ও বিক্রয়ে জড়িতদের জরিমানার পাশাপাশি কঠোর সাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, চলমান মহাযুদ্ধে সরকার, শহীদ চিকিৎসক মঈনুদ্দিন, সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়া ভিক্ষুক নাজিমউদ্দিন এবং লড়াইরত সকল শ্রেণী-পেশার মানবিক প্রাণগুলোর মহান কর্মযজ্ঞ ও অমূল্য আত্মত্যাগের ছবি সহসা বিবর্ণ হয়ে যাবে। বান্দরবান থেকে
×