ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিসি ক্যামেরায় সফল আরএমপি অপরাধ নেমেছে অর্ধেকে

প্রকাশিত: ২২:৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

সিসি ক্যামেরায় সফল আরএমপি অপরাধ নেমেছে অর্ধেকে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরজুড়ে সিসিটিভি (ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা) ক্যামেরা স্থাপনে অপরাধ দমনে সফল হয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ আরএমপি। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পর গত এক বছরে অপরাধ প্রবণতা কমেছে অর্ধেকের বেশি। রাজশাহী নগরীতে এখন অপরাধ করেও পার পাচ্ছে না অপরাধীরা। ক্যামেরার সাহায্যে দুই একদিনের মধ্যেই আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, রাজশাহী নগরীকে এখন সাড়ে ৩০০ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নজরে রাখা হচ্ছে। গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার চালু হলেও এর সুফলও মিলেছে এক বছরেই। বছর ঘুরতেই অপরাধ নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। মহানগর পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে নগরীতে ৩০টি ছিনতাই, ২৬টি খুন, ১০৬টি ধর্ষণ, ১১টি অপহরণ, ৭০টি চুরি, ২ হাজার ৬৫৫টি চোরাচালান এবং অন্যান্য ৫৮৪টি অপরাধ সংগঠিত হয়। তবে সিসি ক্যামেরা বসানোর পর ২০২১ সালে অপরাধ কমে ছিনতাই হয় ১৮টি, খুন ২৯টি, ধর্ষণ ৫০টি, অপহরণ ৫টি, চুরি ৭০টি, মাদক চোরাচালান ১৯৮০টি এবং অন্যান্য ৩২১টি অপরাধ সংগঠিত হয়। আরএমপির সহকারী কমিশনার ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল চৌধুরী জানান, আরএমপির এই ইউনিট এক বছরে ২৭০টির অধিক ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি শনাক্ত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। এই ইউনিটটির সার্বক্ষণিক নজরদারিতে গতবছরের তুলনায় নগরীতে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ অপরাধ কমেছে। এই এক বছরে ইউনিটের কার্যক্রমের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সহকারী কমিশনার বলেন, ক্যামেরা স্থাপনের পর এক বছরে ১০টির বেশি ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আরএমপির এই ইউনিট। ১০০টিরও বেশি চুরির রহস্য উদঘাটন হয়েছে এক বছরে। ১৫টির বেশি হারানো ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ছেলে কিংবা মেয়ে হারানো বা হারিয়ে যাওয়ার নাটক- এমন ঘটনার রহস্যভেদ হয়েছে ১৫টির বেশি। এছাড়া সিসিটিভির মাধ্যমে ২০টির বেশি ইভটিজিংয়ের ঘটনায় অপরাধী শনাক্ত করেছে এই ইউনিট। নগরীর কিশোর অপরাধ দমনেও চালিয়ে যাচ্ছে সার্বক্ষণিক মনিটরিং। ২০টির বেশি মারামারি, ১০ অজ্ঞান পার্টির ঘটনা এবং ৫০টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায়ীদের শনাক্ত করেছে এই ইউনিট। এছাড়া ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী, বিশেষ দিবসের পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং হচ্ছে এখান থেকেই। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী নগরজুড়ে আরও ৫০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আরএমপির। এরইমধ্যে বসানো হয়েছে ৩৫০টির বেশি আইপি ক্যামেরা। প্রত্যেকটি ক্যামেরা হাই রেজুলেশন ভিডিও ধারণ করতে পারে। উচ্চ গতিসম্পন্ন ডাটা ট্রান্সফারের জন্য ১২ কোরের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে এখনে। নগরবাসীর নিরাপত্তা, অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণে এই সংযোজন আরএমপির সফলতা অর্জন করেছে। আরএমপি সূত্র জানায়, সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারে একজন ইন্সপেক্টর, একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও ছয়জন কনস্টেবল এবং বেতার কমিউনিকেশনের জন্য তিনজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন। পালক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন তারা। রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল চৌধুরী বলেন, একটি আধুনিক নগরীর পূর্বশর্ত হচ্ছে সবকিছু ডিজিটালাইজড করা। রাজশাহী নগরীকে ডিজিটাল মহানগরীতে রূপান্তরিত করার প্রথম ধাপ হচ্ছে পুরো নগরীকে সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া। যা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, রহস্যঘেরা জটিল মামলার সহজ সমাধান মিলছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তাই সিসি ক্যামেরার বদৌলতে পাওয়া এমন সফলতার অনেক গল্পই এখন জমেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ঝুঁড়িতে। অভিযোগের তদন্তেও ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে সিসি ক্যামেরা। মহানগরে ছিনতাই ও বখাটেদের অনেক অপতৎপরতাও রুখে দিতে পারছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, শিক্ষানগর হিসেবে রাজশাহীর বেশ পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু এখানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধও সংঘটিত হয়। তাই অপরাধ প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নামাতে পুরো রাজশাহী মহানগর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। নগরীজুড়ে ৩০০ সিসি ক্যামেরা কাজ করছে। আগামীতে নগর নিরাপত্তায় আরও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
×