ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার তথ্যে বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: ১৯:১৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার তথ্যে বিভ্রান্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব নেই কারও কাছে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ কিন্তু ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত খানা জরিপে দেখা যায়, এ হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ আর ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ৯) এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক পরামর্শসভায় বক্তারা বিষয়টি তুলে ধরেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) এবং ক্রিশ্চিয়ান ব্লাইন্ড মিশন (সিবিএম) ‘অস্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধিতার স্থান’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন-২০১১’এর উদ্ধৃতি দিয়ে সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ দশমিক ৬ ভাগ প্রতিবন্ধী, যাদের ৮০ শতাংশ মানুষ উন্নয়নশীল দেশে বাস করে। তবে বাংলাদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান ‘প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ জরিপে’ ৮ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মাত্র ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৩ জন প্রতিবন্ধী মানুষ পাওয়া গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ প্রধান অতিথি হিসাবে সভায় যোগ দেন আর এতে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ মফিদুল ইসলাম। আলোচক হিসাবে অংশ নেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিবিএম’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. মূশফিকুল ওয়ারা, সিডিডি’র নির্বাহী পরিচালক এএইচএম নোমান খান, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি। বিভিন্ন সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতিবন্ধী মানুষকে প্রতিভা বিকাশ ও কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত না করার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী মানুষদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত না করার কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বক্তাদের প্রস্তাবের প্রশংসা করেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সবক্ষেত্রে তাদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সচেতনতার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার এবং শিক্ষকদের ইশারা ভাষার শেখার প্রতি জোর দেন। বক্তারা বলেন, বিগত ২ দশকে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে বিবেচিত হচ্ছে কিন্তু তাদের পরিসংখ্যানগত অবস্থান বিবেচনায় কাঙ্খিত ফলাফল এখনো অর্জিত হয়নি। তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। বক্তারা বলেন, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে থাকে, যার মূল কারণ হলো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠাগুলোতে কাঠামোগত বাধা ও সেবাদানকারীদের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক দক্ষতার অভাব। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী শিশুরা কাংখিত মাত্রায় শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারছে না, যার অন্যতম কারণ হলো যাতায়াতের সমস্যা, সমাজ ও পরিবারের অসচেতনতা, প্রণোদনা ও সহায়ক উপকরণের অভাব এবং শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা। প্রতিবন্ধী মানুষদের উন্নয়নে পরামর্শ সভায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধীদের, বিশেষত প্রতিবন্ধী নারীদের, অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা; সকল ধরনের গণস্থাপনায় সার্বজনিন নির্মাণ নক্শা অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের জন্য প্রবেশগম্য করা; সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সকল ধরনের তথ্য প্রযুক্তিগত কন্টেন্ট, সকল ই-সেবা, ওয়েবসাইট, স্মার্ট ফোনে ব্যবহৃত এ্যাপ্লিকেশন সকলের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা।
×