
.
অনেকটা খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। দীর্ঘ এগারো মাস পর মার্কেট এখন চাঙ্গা। গত সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক ও লেনদেন বেড়েছে। দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই মার্কেট নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট আছে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেও যারা শেয়ারবাজারের খোঁজখবর রাখতেন না তারাও এখন ঢু মারতে শুরু করেছেন মতিঝিল পাড়ায়। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টের খোঁজ নিচ্ছেন। আবার ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকেও ফোন দিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে নতুন বিনিয়োগ ও লেনদেন করার জন্য।
আবার মার্কেট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন। কারণ পুঁজিবাজার নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকেরই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বাজেটেও পুঁজিবাজারে গতি আনতে বেশকিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি বেশকিছু অর্থনৈতিক সংস্কার ও এই মার্কেটের বড় কয়েকজন ‘গেমলার’ গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুঁজিবাজারের দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের হাত ধরে শেয়ারবাজারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে ওঠে। যারা দীর্ঘ সময় বাজার থেকে কারসাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিস্ব করে দিয়েছে।
শেয়ারের দাম কখনো বাড়িয়ে, কখনো কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সিন্ডিকেটের একটি অংশ এখন জেলে এবং একটি বড় অংশ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চারদিন শেয়ারবাজারে বেশ তেজি ভাব ছিল, সূচক বেড়েছিল ৭৮৬ পয়েন্ট। ওই সময় যেসব কারসাজি চক্রের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিল, পরে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, একের পর এক যুদ্ধ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক আরোপ পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিল। মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সুদের হার বাড়ালে কৌশলী বড় বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি ও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকে পড়েন। ফলে তারল্য সংকট এবং একই সঙ্গে আস্থার সংকট তৈরি হয়। তবে এখন মূল্যস্ফীতি কমে আসছে, সুদের হার কমেছে সঞ্চয়পত্রের। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নতুন কোনো সিন্ডিকেট চক্রের জন্ম না হলে আগামীতে শেয়ারবাজার ভালো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বিনিয়োগকারীদের বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের- ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগেরদিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগেরদিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগেরদিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, যে সকল বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলো সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে গতি আনতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
এতে বলা হয়-পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরীসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
বৈঠকে প্রধানত আলোচনা হয় যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হলে পুঁজিবাজার আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলে বৈঠকে মত প্রকাশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি রাখা হয়েছে, তা হচ্ছে- নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও নন-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করের পার্থক্য বাড়ানো। এটি চূড়ান্ত হলে আশা করা যায় আগামীতে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে।
প্যানেল মজি