ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের জেলাগুলোতে নারী শ্রমিক দিয়ে মাঠে কাজ করে অভাব পুরণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

উত্তরের জেলাগুলোতে নারী শ্রমিক দিয়ে মাঠে কাজ করে অভাব পুরণ করা হচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলায় ভরারোপা আমন ও শীতকালীন ফসল চাষে কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে নারী কৃষি শ্রমিক ফসলের মাঠে মৌসুমী কৃষি শ্রমিক হিসেবে ব্যাপক হারে ফসলের মাঠে কর্মসংস্থান হয়েছে। এই শ্রমিক সংকট গ্রামীণ নারীদের উপার্জনে আর্শীবাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে পুরুষের সমান কাজ করেও পারিশ্রমিক মিলছে অর্ধেক। এই শ্রম মজুরি বৈষম্য দুর করতে শ্রম কল্যাণ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে নারী কৃষি শ্রমিক গণ। উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে এখন শীতকালীণ সবজি, তামাক, রোপা আমন ধান রোপনসহ কৃষি ফসল চাষের ভরা মৌসুম চলছে। বেশি মজুরি পাওয়ার আশায় পুরুষ কৃষিশ্রমিকগণ দলবেঁধে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, ঢাকা, কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে উত্তরের লালমনিরহাট জেলায় কৃষিশ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চড়াদামেও পুরুষ কৃষি শ্রমিক মিলাছেনা। এই সুযোগে কৃষিখাতে নারী শ্রমিকের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। প্রতিটি ফসলের মাঠে এখন নারী শ্রমিকের দলবেঁধে কাজ করার সরব দৃশ্য দেখা যায়। গ্রামের পথেহাটলেই চোখে পড়বে। গ্রাম্য ঘর- কনে গৃহবধু গণ এখন দক্ষ কৃষি শ্রমিক হয়ে উঠেছে। তারা ফসলের মাঠে লোকলজ্জা উপেক্ষা করে সানন্দ্যে কাজ করছে। উত্তরের জেলা গুলোতে কৃষিকাজে শ্রমিক সংকটের বিকল্প হিসেবে নারী কৃষি শ্রমিককের চাহিদা তৈরি হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে নারী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। তাতে কৃষকের শস্য উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ী হচ্ছে। কৃষিখাতে নারীর কর্মসংস্থানের প্রভাব দৈনন্দিন জীবনযাপনে পড়েছে। জীবনমান কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কৃষিখাতে এসব নারী শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিলে আরো কর্মসেবা পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলার অবলা নারীর এখন আর অবলা নয়। গামেন্টর্স সেক্টরের পাশাপাশি নরিী শ্রমিকগণ কৃষিতেও শক্ত ভীত তৈরি করে ফেলেছে। প্রতিটি নারীর হাত দক্ষ কৃষি শ্রমিকের হাতে পরিণত হয়েছে। কৃষিখাতে নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্য পড়ে ন্যায্য পারিশ্রমিক হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পুরুষ কৃষিশ্রমিকের সমান কাজ করে মজুরি পুরুষের অর্ধেক পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নারী-পুরুষের এই কৃষি শ্রমের মজুরি বৈষম্য দুর করতে বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। কৃষি শ্রমিকের মজুরি আইন বলবত করার দাবি জানিয়েছে। কাজের পারিশ্রমিক নারী – পুরুষ সমান দাবি করেছে। অর্থনীতির সূত্রে চাহিদা ও যোগান পণ্যের মূল্য নিধারণে তারতম্য সৃষ্টি করে থাকে। শ্রম মজুরির বেলাও তাই। কৃষি শ্রমিকের কাজের অভাব নেই কিনরÍু নারী শ্রমিক সছিক শ্রমের মূল্র পাচ্ছেনা। এই বৈষম্য শ্রম মজুরিতে নারী পুরুষের অর্থনৈতিক বৈষম্যে ফেলেছে। দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দেখা দিতে পারে কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ। দেশের কৃষিজ অর্থনীতিতে নারী শ্রমিকের শ্রম শক্তি যোগ হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি উচ্চমাত্রায় পৌচ্ছে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উন্নয়নের সব সূচককে উর্ধমুখি করেছে। কৃষি নির্ভর গ্রাম-বাংলায় সারা বছর কৃষিকাজের দিনমজুরিতে নারীর ব্যাপক হারে স্থায়ী কর্মসংস্থান ঘটেছে। এতে করে অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত ও স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পূর্ণ কর্মক্ষম নারীর বাড়ির পাশেই কৃষিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একই সংসারের নারী-পুরুষ দুই জনে কৃষি শ্রম বিক্রি করে আয় দ্বিগুণ করেছে। এতে করে সাংসারিক দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা সঞ্চয় হচ্ছে। এভাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। যাহা দশ বছর আগে ছিল দিবাস্বপ্ন। কৃষিখাতে মৌসুমী কাজের অভাবে সেই সময় উত্তরের প্রতিটি গ্রামে দেখাা দিয়ে ছিল মঙ্গা। যাহা ছিল রংপর - লালমনিরহাট অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভিশাপ। সেই চিত্র এখন নেই। কৃষিতে ফসল ফলানোতে কৃষক এনেছে নানা বৈচিত্র। যাহা কৃষি, কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের সমৃদ্ধি অর্জনে অনুঘটকের কাজ করেছে। বর্তমান সরকার কৃষিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখা কবিতায় লিখেছেন, " বিশ্বে যাহা কল্যাণকর অর্ধেক গড়েছে নারী, অর্ধেক নর"। বিগত সরকার গুলোর আমলে বাংলাদেশে ধর্মীয় গোড়ামি, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তার অভাবসহ নানা কারণে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর কর্মসংস্থানে অনিহা ছিল। দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক নারী হওয়া সত্বেও নারী কে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে তেমন সম্পৃক্ত করতে আগ্রহ দেখাননি। বর্তমান সরকার সরকারি সব বাহিনীতে তৃণমূলের কর্মী নিয়োগ দিয়েছে নারীকে। এই কার্যক্রমের পর হতে সকল কাজে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে। এর সুফল কৃষিকাজে আজকের নারী শ্রমিকের আধিক্যতা। স্বল্প আয়ের সংসারে দুই জন বা অধিক নারী সদস্য কৃষি কাজ করে পরিবারে বাড়তি আয় করে সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ অশিক্ষিত, স শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীর উপার্জন করায় পারিবারিক মর্যাদা ও পারিবারিক নীতিনির্ধারণীতে নারীর মতামতের গুরুত্ব বেড়েছে। সেই সাথে পরিবারে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। নারীর পরনির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে। পরিবারে উপার্জন করায় নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে। নারীর সামাজিক, পারিবারিক মূল্যায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দশক আগেও কোন মুসলিম নারীকে গ্রামের কৃষি ফসলের মাঠে কাদা পানিতে ধানের চারা রোপন, আগাছা নিড়ানি, ধানকাটা মারাইসহ শক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ কৃষিখাতের কায়িক শ্রমের কাজ করতে দেখা যেত না। মুসলিম নারী খেত খামারে কাজ করবে সেটা কল্পনার বাহিরে ছিল। সেই সময় উত্তরের কয়েকটি জেলার কিছু আদিবাসী, নিম্নবর্ণের অমুসলিম পরিবারের নারী শ্রমিকদের ক্ষেতে খামারে স্বল্প পরিশ্রম কৃষি কাজ করতে দেখা গেছে। এখন দিন পাল্টে গেছে। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে, সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণ সহায়তা করতে ও কিছুটা উন্নত জীবনযাপন করতে অমুসলিম পরিবারের নারী শ্রমিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুসলিম নারীরাও কৃষি জমি কাজ করছে। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদিতা, নারী বিদ্বেষ, ফতোয়াবাজিতা, নারীর প্রতি হীনমন্যতা বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। বর্তমানে ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার দীর্ঘ মেয়াদি একটাানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় নারীবান্ধব মনোভাব মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমীন লিটন জানান, পৃথিবীর বুকে কৃষি নারীর হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে। নারী শ্রমিক কৃষিকাজে শ্রমঘন্টার অপচয় কম করে থাকে। একজন পুরুষ কৃষিশ্রমিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ধূমপানসহ নানা বাহানায় সময় অপচয় করতে পারে। নারী কৃষি শ্রমিকের বেলায় এটা কম হয়। নারী শ্রমিক রাবেয়া খাতুন (৪৫) জানান, লালমনিরহাটের স্থান ভেদে একজন নারী কৃষি শ্রমিক দৈনিক মজুরি হয়ে থাকে ২৫০/ ৩০০ শত টাকা। পুরুষ শ্রমিকের মজুরি একই কাজে হয়ে থাকে সাড় ৪ শত টাকা হতে ৫ শত টাকা। এতেই বুঝবেন কতটা মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিক। যদিও দেশের প্রচলিত আইনে কোন শ্রমের মজুরি নিধারণে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রাখেনি। বরং মজুরি আইনে নারী ও শিশু শ্রমিকের কায়িক শ্রমে ঝুঁকি মুক্ত রাখতে শ্রম আইনে অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। শ্রম আইনে নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্ম সংস্থানে যুগোপযোগী আইন রয়েছে। আমাদের দেশে কল কারখানায় শ্রম আইন ও মজুরি আইন বলবদ রয়েছে। এই দুইটি আইন দিয়ে রাষ্ট্র তার দেশের প্রধানচালিকা শক্তি শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে। তাই কৃষি কাজে নারী ব্যাপক হারে সম্পৃক্ততা বেড়েছে। দেশে নিম্ন আায়ের অলস বসে থাকা প্রায় প্রতিটি নারী সন্তান ও নিজ সংসারের কাজ কর্ম সামলিয়ে মাঠে কাজ করছে। বেড়েছে গড় কর্মসংস্থান নারীর অংশগ্রহণ। যাহা দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি অর্জন ভুমিকা পালন করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীকে পর্দাপ্রথা মেনে হালাল যেকোন কাজ করতে কোন বাঁধা নেই বলে ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক মোঃ শরওয়ার আলম জানান।
×