নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের খনগা ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় বিজিবির গুলিতে আহত চারজনের মধ্যে রহিমা বেগম (৩৫) নামের আরো একজন মারা যাওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছাত্র ও মহিলাসহ চারজনে। সোমবার রাতে দিনাজপুর ম্যাডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রহিমার। তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোবপুরের আব্দুল বাকির স্ত্রী। এরফলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে স্বজন হারানোর শোক সামলে ওঠার আগেই পুলিশ অজ্ঞাতনামা ছয়-সাতশ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা করায় গ্রেফতার আতংকে ওই ইউনিয়নের ঘিডব, হাবিব পুর, সিটঘিডব গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে গুলি ও রক্তের চিহ্ন লেগে আছে। সে স্কুলটি এবার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নেই কোন মানুষের জটলা। স্থানীয় দোকানপাট গুলোও বন্ধ। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে সরে যাচ্ছেন ওই এলাকার মহিলাসহ বৃদ্ধগন। গ্রাম ঘুরে কিছু ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ও বয়স্ক ছাড়া আর কোনো পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী জানান, ঘিডোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম। কিন্তু ভোটের সঠিক ফলাফলের দাবি করাই আমাদের হয়তো ভুল হয়েছে। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এ নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মত এসেছে। আমরা নারীরাও ভয় পাচ্ছি। আমরাও নিজেদের নিয়ে আটকের শঙ্কায় আছি। তবে ভিটার মায়ায় যেতে পারিনি।
তারা আরও বলেন, আমরাই মরলাম আবার আমরাই মামলার শিকার হলাম। মামলাটি করা হয়েছে হয়রানী করার জন্য। স্বজন হারানোর ব্যাথা আবার গ্রেফতারের ভয়ে আমাদেরই থাকতে হচ্ছে। আহত স্বজনের চিকিৎসার খরচ আমাদের নিম্ন আয়ে সম্ভব না। উপরন্তু পালিয়ে থাকার কারণে খাবারের জন্য অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এই মামলা প্রত্যাহার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নির্বাচনের রাতে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এবং সুনিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।