ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

কবিতা

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৬ নভেম্বর ২০২১

কবিতা

হলদে পাখি জহুরুল ইসলাম দিলপাশার স্টেশনে একটা আহত পাখির কাতর স্বর- ডানা ঝাপটায়- উড়াল দেবে। পাশে রেল লাইন, হয়তো এখনই ঝড়ের গতিতে ট্রেন আসবে। মরা পাতা উড়ে যাবে এলোমেলো, পাখির ডানায় হাওয়া দেবে- কিন্তু ও ঝরা পালকের পাখি। শুধু কাতরায়- ঘাটের সিঁড়ির ওপর হলদে পাখি বসে আছে, পাখি নয় যেন সন্ধ্যা রাতের তারা। ঘাটে নৌকা বাঁধা, মাঝি কাছে আসে-পাখি করুণ সুরে ডাকে। দলছুট পাখি, নৌকার পাটাতনে জলের বুকে ভেসে চলে আপন ঠিকানায়- ** মহুয়া পাতায় ভোর রুনু আঞ্জুমান ইচ্ছে সুর নিয়ে যায় সেই সে মহুয়া বনে তাকে রাতগুলো অপেক্ষার ডানা মেলে থাকে পায়ের ছন্দের তাল নেচে ওঠে পাতার শরীরে ভোর চুমে জেগে তোলে কুয়াশা জড়িয়ে বুকে মাতাল বাহিরে আবার কখনো বুঝি চুপি চুপি কবিতা বাসরে স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে মহুয়া আসরে রাত্রির ছায়ার চোখে স্বপ্ন দোলে ভোরের বাতাস বিছানা আঁচল মোড়া, পেতে থাকে বিশাল আকাশ কখনো শুনিনি আহা ভোর, প্রেম পথ হয়ে যায় সন্ধ্যারা রাত্রির কোলে শেষ রাত্রি-ছায়া কোন ঘ্রাণে গান গায় ঘুমেও নির্ঘুম যেন সেই প্রত্যাশায় শরীরের অবয়ব খোঁজে শুধু মহুয়া পাতায় ** ইরেজার, ভুলগুলোই মুছি গাফফার মাহমুদ হাঁটছি কিছু ভুল পথে রোজ দুর্গম পথ ধরে রোজ হাঁটছি সময় গোনে ভুলের মাশুল বিপ্রতীপ পথেই সময় কাটছি। রাফ খাতাতে তুলি রোজ আতঙ্কিত অংক দু’ছত্রই লিখে কাটি যোগ-বিয়োগের নামতা বন্ধু, খুঁজছি তোরে শেষ বেলাতেই ভুলের মাশুল গুলতিটাই অদৃশ্যরথে ফেলে আসা রোজ ভুলের পাহাড় কোথা আছে খুঁজি তেপান্তরের পথে। অংক কষার ভুলগুলো রোজ ইরেজারেই মুছি জীবন পথের ভুলটাকে আজ কি দিয়ে যে গুচি? ** অভিশাপ ইমন মাহমুদ স্বপ্ন দেখতে দেখতেই অনুভূতিগুলো আত্মহত্যা করে, ভালোবাসার মুখোশে ডুবে মরে বিশ্বাস। দগ্ধ বিষের পেয়ালায় চুমুকে চুমুকে ফুরিয়েছে প্রতিরোধের শক্তি। ফ্যাসিস্ট প্রেমিকার একতরফা আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হৃদয় কেল্লার প্রতিটি কোষ এখন অভ্যস্ত নিত্য নিকোটিনের বিষে। ব্রহ্মপুত্রের টিলা টিলা স্রোত ভেঙে আবার আশি^নের কোন এক পূর্ণিমায় নিঃশব্দে তোমার অভিশপ্ত দরজায় বেলি ফুলের নূপুর নিয়ে হাজির হব। ** শতরূপা শাহীন মাহমুদ জলের প্রচ্ছদে সুনসান শুকনো অন্ধকার হেমন্ত এসেছে এ হৃদয় অরণ্যে বিষণœতায় ঝুলে আছে দূর্বাঘাস শিশিরের আনবিক মুখ নিয়ে। আগুনের গান পাতার মর্মরে বাজে বিদায়ের সুর সোনালি ধানের ক্ষেতে ফড়িংয়ের দল গভীর অরণ্যে নির্বাক হরতকী চোখ শুধু আমাকে ডাকে কোজাগরী রাত শুধু আমাকে ডাকে হিমের শাদা উঠোন আমাকে ডাকে শিউলি রাঙা পা মাতাল কামিনী আমাকে ডাকে শতরূপা দাঁড়াও! চলে তো যাবই তবে যাবার আগে আমারও কিছু বলার আছে। ** জন্মস্থান মামুুন অপু খই ফোটা রাতে আমাদের গ্রামজুড়ে তুখোড় চাঁদ হাটে পদচিহ্নের মত কিছু ক্ষত থেকে বেয়ে পড়ে তেজ সোনার জ্যোতিতে ফুলে ওঠে ঢেউ মহল্লাজুড়ে উড়ে আসে আগুন তখন আমরা পানি পানি করে হাউজে কাউসার খুঁজি কিন্তু আমাদের পাড়ায় এক ফোটা শিশিরের তৃষ্ণায় একটি চামেলি জাগে শেষ রাত পর্যন্ত গন্তব্যহীন বাতাসের কানে বলে দেয় মেঘের শিস আজ রাতের ঢেউগুলো পাখি হবে উড়ে যাবে মানুষের পশম-বৃক্ষে তাদের জন্মস্থানে। ** শুকনো চোখের কান্না আহমাদ সোলায়মান শুকনো নদীর আত্মকথা বলে তুমি সুনাম কুড়াও অথচ, শুকনো চোখের কান্না দেখো না এক সময় এই চোখে তুমি চাষ করতে সবুজ স্বপ্ন ভালোবাসার জলে সেচ দিয়ে দিয়ে ফসলে ভরাতে চোখের মাঠ নিয়ম মেনে বৃষ্টি দিতে, রোদ দিতে, যতœ আর পরম মমতা দিয়ে সতেজ রাখতে সব স্বপ্নকে। অথচ, আজ তুমি শুকনো নদীর আত্মকথা বলে সুনাম কুড়াও অথচ, শুকনো চোখের কান্না দেখো না। ** তোমাকে পাঠ করলে নুসরাত সুলতানা কথা বলা ময়না পাখির মতো তোমাকে নিবিড় পাঠ করি। রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকাসহ চোখের তারায় লেখা গুচ্ছ গুচ্ছ অপ্রকাশিত শব্দ পাঠ করে আমি বিমোহিত হই। তোমার চোখ পাঠে পেয়েছি এক সমুদ্র শান্ত জলের গতি। পায়রা যুগলের বাক-বাকুম সুখ। তোমাকে পাঠ করলে পাঠ করা হয়Ñ পাকা ধানের গন্ধ, লাউয়ের পাতায় লেপ্টে থাকা শিশিরের মুক্তা, অব্যক্ত প্রতিকারহীন অসুখ। এমনকি, মাচান ভর্তি ফল ভরা পুঁই। গর্ভবতী ধানের শিষ। তোমাকে পাঠ করলে পাঠ হয় পৃথিবী।
×