ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৫ নভেম্বর ২০২১

তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য

তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য থামছে না কিছুতেই। বরং বেড়েই চলেছে দিন দিন। করোনা অতিমারীকালীন লকডাউন-শাটডাউনে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও সবটা স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ইদানীং বেড়েছে বহুগুণ। স্বভাবতই তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে সরকারী অফিস-আদালতে। কেননা, সেখানে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজকর্মসহ কর্মস্থানের সুযোগ-সুবিধা সর্বাধিক। তদ্বির করে প্রমোশনের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়ে থাকে। প্রায় সর্বত্র তৈলবাজি ও তদ্বির ব্যতিরেকে কোন কাজ হয় না বললেই চলে। সবচেয়ে বেশি তদ্বিরকারীদের ভিড় দেখা যায় সচিবালয়ে। করোনার কারণে সচিবালয়ে বর্তমানে দর্শনার্থীদের পাস প্রদান বন্ধ থাকলেও প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে অথবা ভিন্ন পথে ভিন্ন কায়দায় ‘প্রহরীদের’ মন রক্ষা করে সচিবালয়ে প্রবেশের পর ভিড় জমিয়ে থাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। শুধু যে সচিবালয়েই তদ্বিরবাজদের ভিড় দেখা যায় তা নয়, বরং বহুগুণ বেশি দেখা যায় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা থানা-পুলিশ, আদালত চত্বর, ভূমি অফিস, বিআরটিএ কার্যালয়, এজি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, ডিসি অফিস এমন কি টিএনও কার্যালয়ে। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনপ্রশাসন, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, মানবসম্পদ ও শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও তদ্বিরবাজদের উৎপাত-উপদ্রব কম নয়। কেননা, এসব মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে কাজ হয় অনেক বেশি। ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়াসহ যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, বিদেশে লোক প্রেরণ, জমি বেচা-কেনাসহ থানা-পুলিশের প্রসঙ্গ এলেই অনিবার্য উঠে আসে তদ্বিরবাজদের বিষয়টি। সরকারী হাসপাতালগুলোতেও দালাল তথা তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না কোনক্রমেই। ফলে অসহায় গরিব মানুষ, গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল শিক্ষক, অসুস্থ রোগীর স্বজনদের হয় পরিত্রাহী অবস্থা। একে তো দালাল ও তদ্বিরবাজদের দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে পথে ঘাটে ‘ফেলো করি মাখ তেল’ অবস্থা আর কি! তদ্বির করা না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন কাজ হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ হলেও পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানি। ভুক্তভোগী প্রায় সবারই হয় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। পাশাপাশি রয়েছে ঠিকাদাদের দৌরাত্ম্যও। ইদানীং অনেক ক্ষেত্রে সরকারী কেনাকাটা অনলাইনে টেন্ডারে আহ্বান করা হলেও সেখানেও তদ্বির বা দালালদের আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। এমনটি বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে, তদ্বির ছাড়া কোথাও কোন কাজ হয়। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, তৈলবাজি বা তদ্বিরকারীদের দৌরাত্ম্য সর্বত্র বিরাজমান। এটি যেন ঘুষ ও দুর্নীতির অপর পিঠ। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান সরকার সব রকম দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সেটা যে কোন মূল্যে বাস্তবায়িত করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং দেশ ও জাতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতির পিতা বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুষ-দুর্নীতিকে কখনই প্রশ্রয় দেননি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অনড় ও অনমনীয়। কথা নয়, কাজেও এর একাধিক প্রমাণ মিলেছে ইতোমধ্যে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে দালাল তদ্বিরকারী দুর্নীতিবাজ প্রত্যেককে। যে কোন মূল্যে দেশকে দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গীমুক্ত করতে হবে। ত্রিশ লাখ শহীদ ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রাখতে হবে অমলিন ও কলুষমুক্ত। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজের জন্য দেশের অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না কোন অবস্থাতেই। যে কোন মূল্যে খর্ব করতে হবে তদ্বিরবাজ ও তৈলবাজদের প্রভূত দৌরাত্ম্য।
×