ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার পরীক্ষায় ব্যাপক সাড়া

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কেরানীগঞ্জে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার পরীক্ষায় ব্যাপক সাড়া

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ জানুয়ারি মাস বিশ্বব্যাপী জরায়ুমুখের ও স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। তাই এ মাস সামনে রেখে দক্ষিণ এশিয়া মেডিক্যাল ফিজিক্স ও ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রের আয়োজনে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কেরানীগঞ্জের আটি পাঁচদোনা কমিউনিটি ক্লিনিকে রবিবার দিনব্যাপী চলে বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা কর্মসূচী। এ সময় ১০০ নারীকে এই সেবা দেয়া হয়। এ কর্মসূচীতে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে কোন নারী এই সেবা নিতে পারেন এবং ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে কোন নারী স্তন পরীক্ষার সেবা নিতে পারেন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য গুণগত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে পর্র্যায়ক্রমে পুরো দেশে চলে এ কর্মসূচী। সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার। জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়া মেডিক্যাল ফিজিক্স ও ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আলোর ভুবন ট্রাস্টের প্রধান প্রকল্প। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ক্যান্সার চিকিৎসার মান উন্নয়নে কাজ করে চলছে। বর্তমানে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে মহিলাদের প্রায় ১২% জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত। জরায়ু ক্যান্সারের জন্য মূলত হিউম্যান ল্যান্সিলোসা ভাইরাস দায়ী। এই ভাইরাস সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও অল্প বয়সে বিয়ে হলে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করলে জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু তাই নয়, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলন এবং যৌনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকলেও জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও এই রোগের অন্যান্য কারণগুলো হলো স্ক্যানিং পদ্ধতির প্রচলন না থাকা, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সচেতনতা অভাব, বাল্য বিয়ে, অধিক সন্তান জন্মদান ও যৌনবাহিত রোগসমূহ। সাধারণত ৩০ বছর রয়স থেকে নারীদের মধ্যে এর লক্ষণ দেখা দেয়। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো অনিয়মিত ঋতুস্রাব, যৌন সঙ্গমের পর রক্তস্রাব, স্বাদাস্রাবের আধিক্য, দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব হওয়া। এই রোগ ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নেয়, এমনকি ১৫-২০ বছর পর্যন্ত সময়ও লেগে যেতে পারে। তবে নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের পূর্ণ লক্ষণগুলো সহজেই শনাক্ত করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো জরায়ুমুখ পরীক্ষা। চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের দেশে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিবছর এই স্ক্যানিং করা এতে ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে পারি, আর ক্যান্সার সাধারণত একদিনে হয় না, এসব স্থানে ক্যান্সার হতে সময় লাগে প্রায় ১০ বছর। তাই আগে থেকেই পরীক্ষা করা হলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। তবে সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্যানিং সেবা সম্প্রসারিত করেছেন। দরিদ্র নারীদের সেবা প্রদান ফলোআপ ও স্ক্যানিং পজিটিভ মহিলাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবাদানকারীদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণে দ্রুত সেবাদান করে থাকেন। প্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্স পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্যারামেডিক্স এবং চিকিৎসকগণ ভায়া পরীক্ষা করে থাকেন। কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের ঢাকা বিভাগের কো-অর্ডিনেটর হারুন অর রশিদ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহামুদ উল্লাহ, ট্রেনিং ডকুমেন্টটেশন অফিসার জান্নাত আরা তাহামিনাসহ আরও অনেকে। জান্নাত আরা তাহামিনা বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের ব্যাপারে বেশি অজ্ঞ, তাই আমরা গ্রামের অজ্ঞ ও দরিদ্র নারীদের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন করছি। রবিবার কেরানীগঞ্জে ১০০ নারীকে পরীক্ষা সেবা দিয়েছি এবং আমাদের এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেশব্যাপী চলমান থাকবে।
×