ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের

বেগমপাড়ার সাহেবদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০২০

বেগমপাড়ার সাহেবদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কানাডার বহুল আলোচিত বেগমপাড়ার সাহেবদের ধরা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বেগমপাড়ার সাহেবদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ব্যাপারে সার্বিক তদন্ত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানা তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিক এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। এ সময় মন্ত্রী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ, মন্ত্রিসভা ফের পরিবর্তন হবে কিনা, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া গোল্ডেন মনিরসহ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতেও কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। গত কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, কানাডার বেগমপাড়ায় যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের মধ্যে সরকারী আমলার সংখ্যা বেশি। ওবায়দুল কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নজরে আনার পর থেকেই সক্রিয় হয়েছে সরকার। দুদকের তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের পরিচয় অর্থপাচারকারী। এর মধ্যে যদি কোন সরকারী কর্মকর্তা থাকেন, সরকারের কাছের লোক থাকেন, তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। সম্প্রতি ডিআরইউয়ের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানান, কানাডার বেগমপাড়ায় কিছু বাংলাদেশী বাড়ি-গাড়ি করেছেন। তারা অর্থপাচারকারী। এদের বেশিরভাগই সরকারী আমলা। মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর উচ্চ আদালত তাদের নাম জানতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত শেষে পাচারকারীদের নামও প্রকাশ করা হবে। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে কঠোর সিদ্ধান্ত ॥ কিছুদিন ধরেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে সরকারী হিসাবে। এই পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষের জীবন আগে। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে। কাজেই সব দিক চিন্তা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পুরো লকডাউন সম্ভব না, পাকিস্তান করতে পারেনি, ভারত যা করেছে তাতেও লাভ হয়নি। রোজ রোজ সংক্রমণ বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। তবে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা মাস্ক পরবে না জরিমানা হবে। এ বিষয়টি স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর। করোনা রোধে সরকার কী ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেÑ জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সিদ্ধান্ত হতে পারে যদি কোন রেস্ট্রিকশন দিতে হয় সেটিও হতে পারে। মফস্বলে তো একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মানে না। তবে এ রকম (লকডাউন) কিছু না। গতি-প্রকৃতি দেখে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সেটাই কঠোর সিদ্ধান্ত। কড়াকড়ি করা হবে। যেমন ফ্রি স্টাইলে মাস্ক না লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো। মানুষের এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রিসভা পরিবর্তন নয় ॥ মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে এ মুহূর্তে মন্ত্রিসভা পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছে। তিনি একজন ভাল লোক। জামালপুরের ইসলামপুরের সংসদ সদস্য, তাকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। আর এ মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় কোন পরিবর্তনের কথা আমি জানি না। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে ওটা (ধর্ম) যেহেতু খালি সে জন্য পূরণ করছে। এ সময় আর পরিবর্তন তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, করোনাকালে মন্ত্রিপরিষদে কিছু বিষয় আছে। কাজের বিষয় আছে। ফিজিক্যাল প্রেজেন্ট দিয়ে কাজ করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী জরুরী কোন পরিবর্তন দরকার আছে বলে মনে করছেন না। গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে ॥ র‌্যাবের অভিযানে বিপুল অর্থসহ গ্রেফতারের পর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে আলোচনায় আসা গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, কারা তাকে সহযোগিতা করেছে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। গণমাধ্যমে এসেছে গোল্ডেন মনির সরকারদলীয় একজন প্রতিমন্ত্রীকে গাড়ি দিয়েছেন এবং এমপিদের সঙ্গে তার যোগসাজশ ছিল’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যমে সে খবর বের হওয়ার পর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সেটার তদন্ত করছে। কোন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক, আর কোন কোন এমপির সঙ্গে তার যোগাযোগ সে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বাসায় ২০০ এর বেশি প্লটের কাগজ পাওয়া গেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, এরসঙ্গে যারা যারা জড়িত, যারা তাকে হাতিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এখানে শুধু অপকর্মকারী যে প্রত্যক্ষভাবে করেছে তা নয়, তার মদদদাতা কে সেটাও দেখবে। দুইটাই তদন্ত হচ্ছে, দুইটাই ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুইটাতেই যারা অপরাধী, অপকর্মকারী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৮ তারিখ পার্টির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ॥ আসন্ন পৌরসভার নির্বাচন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন ২৫টি পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ তারিখ সাড়ে ৩টায় পার্টির স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানে ২৫ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করব। আজ থেকে মনোনয়ন জমা শুরু। দল তো এখন অনেক কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়ে সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। অপকর্ম করে দলীয় পরিচয়ের কেউই এ পর্যন্ত রেহাই পায়নি এবং দলীয় পরিচয় কারও আত্মরক্ষার ঢাল হতে পারে না। কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলো কেউ চিন্তাও করতে পারে না, সেসব বিষয়ও আসছে। এই যে গোল্ডেন মনির এসব নাম শুনিওনি। এসব ব্যাপারে আসলে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। অপরাধীর ঠাঁই দলে হবে না ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি বলে দিয়েছি ধর্ষক ও নারী অবমাননা করে এমন কোন অপরাধী যদি আওয়ামী লীগে বা কোন সহযোগী সংগঠনেও ধরা পড়ে তাদের জন্য চিরতরে আওয়ামী লীগের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু সাসপেন্ড করে দায়িত্ব পালন করলে হবে না। এ ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করছি এবং কাউকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নেই। তিনি বলেন, দুটি জেলার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আমরা পরিবর্তন করেছি, যারা পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তী জয়েন্ট সেক্রেটারি; গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে কিছু অন্তর্কলহ আছে, তারা সেগুলো দূর করতে পারছিলেন না, সামাল দিতে পারছিলেন না বলে নতুন নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে সমস্যা দেখা যাবে তাদের পরিবর্তন করা হবে, আমি আগেও বলেছি দলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের আর কেউই অপরিহার্য নয়। কাউকে কোন পদ চিরস্থায়ী লিজ দেয়া হয়নি। জনপ্রিয়রাই মনোনয়ন পাচ্ছেন ॥ বিদ্রোহীদের বিষয়ে তিনি বলেন, সবার ওপরই জনগণ। আমাদের দলে হয়ত একজন দায়িত্বে আছে দীর্ঘদিন। কিন্তু যখন নির্বাচনের প্রশ্ন আসে তখন তার জনপ্রিয়তার প্রশ্ন। সেই জনমত জরিপ বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সোর্সে খোঁজ-খবর নিয়ে যে বেশি জনপ্রিয় তাকেই দেয়া হচ্ছে। যাদের কথা বলছেন তাদের কিন্তু ক্ষমা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্রোহে আর যাবে না সে শর্তে প্রধানমন্ত্রী তথা পার্টির সভাপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিল, তাদের ক্ষমা করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে এমন কাউকে দেয়া হয়নি।
×