ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১২ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী

নিখিল মানখিন ॥ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল সর্বোচ্চ। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ের শেষ দিকে বাংলাদেশে করোনায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক ডাঃ এএসএম আলমগীর শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে যখন দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তখনই করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। মৃত্যু, আক্রান্ত ও শনাক্তের হারের দিক দিয়ে দীর্ঘদিন প্রায় একই অবস্থানে ছিলাম আমরা। এভাবে দীর্ঘদিন অবস্থান করার পর পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেছে। উন্নতির এই ধারা গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। পিক পরিস্থিতে দীর্ঘদিন থাকার পর উর্ধমুখী না হয়ে নিম্নমুখী হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ। এদিকে ভাইরাস শনাক্তের অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষারোধে উদ্যোগ গ্রহণের কারণে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। করোনায় আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে ডাঃ এএসএম আলমগীর বলেন, মহামারী অবস্থায় একই জায়গায় অবস্থান করার পর সংক্রমণের হার নিম্নগামী হয়ে তা অব্যাহত থাকলে ওই দেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলে ধরে নেয়া যায়। মহামারীতে আক্রান্ত প্রায় সব দেশেই এমনটি ঘটছে। তিনি আরও বলেন, এক মাস আগেও বিশ্বে প্রজনন হার ছিল ১ঃ২, এখন তা ১ঃ১-এ নেমে এসেছে। এই অবস্থায় একজন করোনা রোগী অন্য একজনকে সংক্রমিত করে। বাংলাদেশের অবস্থা আরও ভাল। এখন বাংলাদেশে আক্রান্তের পরিমাণ ১ঃ১-এর নিচে। জুলাইয়ের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছেন ডাঃ এএসএম আলমগীর। তিনি বলেন, সামনে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপিত হবে। পশুর হাটসহ কোরবানির মতো বিষয় রয়েছে। হাজার হাজার মানুষের স্থান পরিবর্তন ঘটবে। ঈদ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণজমায়েত হবে। এসব করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না থাকলে জুলাইয়ের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরিবর্তে অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। পরীক্ষার হার কমেছে যে কারণে ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তের অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষারোধে উদ্যোগ গ্রহণের কারণে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এতদিন উপসর্গহীন অনেক মানুষ একাধিকবার করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। এখন শুধুমাত্র উপসর্গ থাকা সন্দেহজনক করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষার বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের পর উপসর্গ না থাকলে করোনা আক্রান্ত রোগীর সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব কারণে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা হ্রাস পেলেও রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে। শনাক্তের হার যতই বৃদ্ধি পাবে, নমুনা পরীক্ষার সফলতা ততই বাড়বে। তিনি বলেন, পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতেই পারে। এমন দিন গেছে যখন মানুষ উপসর্গ ছাড়াই বারবার করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন ইচ্ছে মতো নমুনা সংগ্রহ ও পাঠালেই হবে না। নমুনা সংগ্রহ করার সময় রোগীর উপসর্গ ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আর উপসর্গ থাকা সন্দেহজনক করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতদিন করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে যাবার পর টেস্ট করা হতো। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরপর দুইবার টেস্ট করানোর পর সুস্থ ঘোষণা করা হতো। এটির প্রয়োজন নেই। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর রোগীর শরীরে কোন উপসর্গ না থাকলে তাকে সুস্থ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কারণেও নমুনার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা হ্রাস পেলেও রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১ জুন থেকে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ১১ হাজারে উঠে আসে এবং তা জুন মাস জুড়ে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১৫ জুন ১৪ হাজার এবং ২০ জুনের মধ্যে ১৫ হাজারে পৌঁছে যায়। এভাবে ২৫ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজারের মধ্যে। গত ৪ জুলাই হঠাৎ করে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে নেমে আসে ১৪ হাজারে এবং ৫ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে এবং সর্বশেষ ১১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১১ হাজার ১৯৩টি।
×