ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে করোনার উপসর্গ শুনলেই চিকিৎসক উধাও

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৩০ জুন ২০২০

বরিশালে করোনার উপসর্গ শুনলেই চিকিৎসক উধাও

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশল ॥ করোনার প্রভাবে জেলার গ্রামীণজনপদে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে যেকোনো রোগ নিয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। পাশাপাশি মৌসুমী জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালে আসলেই আত্মগোপন করছেন চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্ট। ফলে অন্যরোগীরাও চিকিৎসাসেবা থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, জেলার অধিকাংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও আউটডোরে নামেমাত্র কার্যক্রম চলছে। এ অবস্থায় গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য এসে প্রতিনিয়ত শুধু তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক পথে জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য গত রবিবার সকালে নমুনা দিতে আসেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন চাকরিজীবী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষার কথা বলার সাথে সাথেই কৌশলে হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট এবং কর্মরত চিকিৎসক আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সকাল নয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে অপেক্ষা করতে হয়। এরমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। পরবর্তীতে তাদের নির্দেশে অনেকটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ন্যায় নমুনা নেন প্যাথলজিস্ট। আক্ষেপ করে নমুনা দেয়া ওই ব্যক্তি বলেন, আমার সাথে চিকিৎসকদের ভাল একটা সম্পর্ক, অথচ এখন যেন তারা আমাকে চেনেনই না। সূত্রমতে, ওই হাসপাতালের ইনডোর এবং আউটডোর ব্যবস্থা অনেকাংশে অচল। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মোঃ আমরুল্লাহ বলেন, হাসপাতালে টেস্ট কিটের চরম সংকট রয়েছে। তাছাড়া নমুনা পাঠালেও রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়। যে কারণে নমুনা সংগ্রহে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইনডোরের কার্যক্রম এখন লকডাউন বলতে নতুন কোন রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছেনা। আউটডোরে স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যাথলজিস্ট বিভূতি রঞ্জন বাড়ৈ দীর্ঘদিন করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে এখন নিজেই আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে বর্তমানে সেখানে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগিরা বলেন, চিকিৎসক সংকটে বর্তমানে যেকোন রোগীদের চিকিৎসাসেবা পাওয়া কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে আটটি চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন মেডিক্যাল অফিসার ও আরএমও। তাই চিকিৎসক সংকটে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। করোনার নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট আক্রান্ত হওয়ায় নতুন লোক খোঁজা হচ্ছে। মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর ও ইনডোরের কার্যক্রম চলছে দায়সারাভাবে। করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালে আসলে চিত্র পাল্টে যায়। তখন আর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকদের খোঁজ পাওয়া যায় না। হাসপাতালের সামনে দুটি বুথ করে কোনো রকম চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, যেকোনো রোগী হাসপাতালে আসলে আগে নিশ্চিত হতে হবে তার মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েছে কি না। এসব কারণে চিকিৎসকরা হয়তো কিছুটা সতর্ক রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সবধরণের স্বাস্থ্যসেবা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বহাল রয়েছে। তবে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে করোনার নমুনা সংগ্রহের কীট সংকটের কথা বলা হলেও সিভিল সার্জন বলেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত কীট রয়েছে।
×