ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কংস নদীর ভাঙ্গনের মুখে পাঁচ গ্রাম

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৭ জুন ২০২০

কংস নদীর ভাঙ্গনের মুখে পাঁচ গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ২৬ জুন ॥ বর্ষার শুরুতেই নেত্রকোনার কংস নদের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ কারণে নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি ফকিরের বাজার থেকে ঠাকুরাকোনা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, আষাঢ় মাসের শুরুতেই নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কংস নদ পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। খরস্রোতা নদটি দিয়ে বইছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল। ঢলের তোড়ে বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের কর্ণপুর, নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের চরপাড়া, পাঁচপাই, জাহাঙ্গীরপুর ও বাঘরুয়া গ্রামে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত ফকিরের বাজার-ঠাকুরাকোনা রাস্তাটিরও চরপাড়া এলাকার আধা কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কিছুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ রাস্তাটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। চরপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার জানান, কংস নদের ভাঙ্গন সমস্যা চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। তবে গত কয়েক বছরে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। গত চার-পাঁচ বছরে উল্লেখিত পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘরের পাশাপাশি বিলীন হয়েছে অনেক জমি-জমাও। এতে সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে বহু পরিবার। বেশিরভাগ পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ বিষয়ে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ডিজাইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। যমুনার তীব্র ভাঙ্গনে বিলীন বসতি নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গেল মাস খানেকের ভাঙ্গনে ফসলি জমিসহ শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যদিও ভাঙ্গন রোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। সরেজমিনে উপজেলার কষ্টাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সত্তর বয়সী বৃদ্ধা রেজিয়া বেওয়া তার দুই ছেলে ও ছেলের বউদের নিয়ে স্বামীর ভিটা রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘবছর ধরে রেজিয়া সেখানে বসবাস করে আসছেন। গেল ৫ বছর ধরে যমুনা নদীতে অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে ইতোমধ্যে স্বামীর ভিটার অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ির স্মৃতি রক্ষার্থে বাকি বাড়ির জমিটুকু বাঁচাতে বস্তায় মাটি ভর্তি করে সন্তান ও তাদের বউদের সঙ্গে নিজেই কাজ করছে। জানা গেছে, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বেশ কিছু এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি যমুনাগর্ভে চলে গেছে। গোবিন্দাসী, অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইলে চারটি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এমন ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের পুরাতন জনপদ হিসেবে খ্যাত কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি ও ভালকুটিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গনরোধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন পারভীন বলেন, ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙ্গনে দিশাহারা পদ্মা পারের মানুষ স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ভাঙছে নদী তীর। পানির চাপে ক্রমেই ধসে পড়ছে নদী তীরের মাটি। এ অবস্থায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাওথা এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে রাওথা এলাকার প্রায় ৩৬ বছর আগের পুরনো মসজিদসহ বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লা নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। নদী তীর ভাঙ্গনের ফলে এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মাপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও প্রতিরোধে নেয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে নদী ভাঙ্গনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন রাওথা এলাকার কয়েক লাখ পরিবার। সরেজমিন উপজেলার ভাঙ্গনকবলিত রাওথা এলাকা ঘুরে নদী তীর ভাঙ্গনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, এক সময় যে মাঠে ফসল চাষ করা হতো। আজ সেই মাঠজুড়ে অথৈই পানি। সব ভেঙ্গে আজ নদীর বুকে চলে গেছে। আবাদি জমিও নেই। ঘর-বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। নদীর বুকে চলে গেছে ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। এখন হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামটি। যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে গ্রামটি। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকেই হয়তো বিলীন হতে পারে গ্রামটির নাম। রাওথা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমান জানান, বন্যার সময় হলেই এলাকায় দেখা মেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। এর আগে তারা কোন দিনই আসেন না ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে। বছরের পর বছর ধরে ভয়াল পদ্মায় রাওথা এলাকার মানুষ সব কিছু হারিয়ে বড়ই অসহায়। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া ফসলি জমি সব কিছুই আজ নদীগর্ভে। এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, রাওথা এলাকায় উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। যেখানে নদীর পাড় ভাঙছে সেখানে নক্সার কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×