ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারনেটেই ভরসা

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২৭ জুন ২০২০

ইন্টারনেটেই ভরসা

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা মহামারী মানুষের জীবনধারা বদলে দিয়েছে। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। এমনি পরিস্থিতিতে মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম এখন ইন্টারনেট। এই মহাসড়ক দিয়েই মানুষ বিশ্বকে একটি জায়গায় নিয়ে আসছেন। ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকার। অন্য খরচ কমিয়ে মানুষ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কিনছেন। কিন্তু ইন্টারনেটের চরম ধীর গতিতে মানুষ কেন আমিও হতাশ। দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের বিপুল পরিমাণ মজুদ রয়েছে। কিন্তু অপারেটররা তা কিনছেন না। ফলে তারা গতি বাড়াতে চাইলেও পারছেন না। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের গতি বেশি থাকতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন চিকিৎসা থেকে অফিস আদালত বিনোদন সব কিছুই হচ্ছে। তবে এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ২ হাজার এক শ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথের মালিক হবে। তখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি বাড়বে। জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সূত্র জানিয়েছে, নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনটিই ভালভাবে দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত কিংবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে আয়োজন বা যোগদানের সুযোগ নেই। ঘরে বসে সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যম এখন ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের বাইরে কেউ টেলিভিশন দেখেই সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ বই পড়ে-লেখালেখি করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে ইন্টারনেট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা মানুষকে সময় পার করতে বেশি সাহায্য করছে। কিন্তু সেই ইন্টারনেট কি তার গতি ঠিক রাখতে পারছে? করোনাকালে ইন্টারনেটের গ্রাহক বেড়েছে এক কোটি। এর আগে ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি। করোনার এই দুর্যোগে মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেটকেই সঙ্গী করেছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের দাম বাড়লেও মানুষ অন্য খরচ কমিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিচ্ছেন। সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোও চলছে ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে। হচ্ছে জুম মিটিং। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্টারনেটকে সহজ লভ্য করতে হবে। দেশে বর্তমানে ৯৮ ভাগ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাকি ৬ ভাগ মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আমি নিজেও গত মার্চ মাস থেকে বাসায় বসে অফিস করছি। অফিসের ফাইল সই করছি। অফিসে কোন ফাইল পেইডিং নেই। এখন আমাদের বড় কাজ হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে আরও ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। তার জন্য সি-মি-উই-৫ কেবলের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ২ হাজার এক শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট প্রয়োজন হবে বলে একটা হিসাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সি-মি-উই-৫ কেবলের ‘ক্যাপাসিটি’ বাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। সি-মি-উই-৪ থেকে বর্তমানে ৪শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এক কোটির ওপর ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে। জানুয়ারি মাস শেষে দেশে মোবাইল ফোন, ব্রডব্যান্ড ও অন্যান্য মাধ্যমভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৬ হাজার। এই সংখ্যা মার্চের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজারে। বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেয়া সাধারণ ছুটির মধ্যে মানুষ ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করছে। আবার এই সময়ে অনেক নতুন গ্রাহকও তৈরি হয়েছে। মানুষ ফোনে কল করে কথা বলা কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) ভিত্তিক মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলছে। এর মধ্যে রয়েছে হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, ফেসবুক মেসেঞ্জারসহ আরও নানা মাধ্যম ব্যবহার করছেন। এখন ইন্টারনেট মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবনযাপনের লাইফলাইন হচ্ছে ইন্টারনেট। অফিস করতে হচ্ছে ইন্টারনেটে। ব্যবসা ইন্টারনেটে। বিচারকাজও ইন্টারনেটে শুরু হয়েছে। সমাজের সবক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে। আমরা ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই বসবাস করছি। এখন করোনার কারণে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। করোনা শেষেও ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়বেই। যারা একবার ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছেন তারা আর ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে পারবেন না। মানুষ এখন আর মোবাইলে কথা বলতে খুব বেশি আগ্রহী নন। মানুষের দরকার ডেটা। এটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। দিন দিন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়বেই। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমবে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮শ’ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে দিয়েছি। বাকি ৭৭৭টি দুর্গম ইউনিয়নে স্যাটেলাইট বা অন্য কোন উপায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেব এ বছরের মধ্যে। সূত্র জানিয়েছে, সি-মি উই ৫ সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ নতুন করে ১ হাজার ৫০০ গিগাবাইটের (জিবি) বেশি ব্যান্ডউইথ পাবে। তবে বর্তমানে এই ক্যাবলের মাধ্যমে ১১শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। কেবলটির সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য নতুন করে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে বাকি আরও ৪শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মোট ১৫শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেশে আসছে। আরও ৬ টেরিটরিয়াল ক্যাবলের মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ আসছে। দেশে ব্যান্ডউইথের কোন ঘাটতি না থাকলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এই কেবলটির দূরুত্ব ২০ হাজার কিলোমিটার। দীর্ঘ এই কেবলের গতি ২৪ টেরাবাইট পার সেকেন্ড (টিবিএস)। এক হিসাবে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি মানুষ এখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। এর বেশির ভাগটাই আবার মোবাইল নেটওয়ার্ক। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেটের হার সবচেয়ে বেশি। ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এখন জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া চলমান। ফলে এসব দেশের মোবাইল ফোনগুলো এখন বিনোদন, যোগাযোগ ও অফিসের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। দেশে মোবাইল অপারেটরদের যে পরিমাণ ‘ক্যাপাসিটি’ তার কয়েক গুণ চাপ বেশি পড়ছে তাদের ‘সিস্টেমের’ ওপর। তারা ভয়েস কলেই ঠিকমতো সেবা দিতে পারছেন না। এর ওপর যোগ হয়েছে ইন্টারনেট।
×