ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প ভেপিং

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ২১ এপ্রিল ২০২০

ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প ভেপিং

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ধূমপানে আসক্তি কমাতে অনেকেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ই-সিগারেট বা ভেপিং। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) এক গবেষণায় দাবি করা হয়, ধোঁয়ার চেয়ে বাষ্প অনেক বেশি নিরাপদ। তামাক সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ কম। ফলে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে তামাকবিহীন ই-সিগারেট তুলনামূলক কম ক্ষতিকর হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রচলিত একটি তামাকজাত সিগারেট পোড়ানোর সময় প্রায় সাত হাজারের মতো কেমিকেল ধূমপায়ীর শরীরে প্রবেশ করে। তামাক পোড়ানো ছাই থেকে সৃষ্ট এসব কেমিকেলই মূলত ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। অপরদিকে ই-সিগারেট বা পারসোনাল ভ্যাপোরাইজার হচ্ছে প্রচলিত সিগারেটের একটি আধুনিক বিকল্প। এগুলো সাধারণত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দ্বারা চালিত হয় এবং এক ধরণের জলীয় বাষ্প তৈরী করে। এ প্রযুক্তিতে ব্যাটারি চালু করার পর এটি একটি হিটিং কয়েলকে উত্তপ্ত করে যাকে এটোমাইজার বলা হয়। কম তাপমাত্রায় এটি একটি বিশেষ ধরণের তরল পদার্থকে বাষ্পীভূত করে যেটিকে সিগারেটের ধোঁয়ার মত মনে হয়। প্রচলিত সিগারেটের মতই এ বাষ্প ধুমপায়ীদের দেয় সিগারেটের তৃপ্তি। ফলে ভেপিংয়ের সময় যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় সেটি আসলে ধোঁয়া নয়, এটি হচ্ছে এক প্রকার বাষ্প যাকে ক্লাউড বলা হচ্ছে। বাষ্পের কারণে প্রচলিত সিগারেট থেকে ভেপিং কম ক্ষতিকর। এছাড়াও নিকোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে ব্রিটেনে যারা ধূমপান ছাড়তে চান তাদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভেপিং। ই-সিগারেট প্রস্তুতকারীদের দাবি, ভেইপে শুধু নিকোটিন থাকে। যা ধূমপায়ীদের ক্যাফেইনের মতো আশক্তি তৈরী করে এবং শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশে সিগারেট ছাড়তে অনেককে গত কয়েক বছর ধরে ভেপ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও সেন্টার্স ফর ডিসিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ই-সিগারেটের পক্ষে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাপিং নিয়ে চলমান শঙ্কা ও বিতর্কের মধ্যে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ই-সিগারেট সম্পর্কে আমাদের পরামর্শ অপরিবর্তিত রয়েছে। ভ্যাপিং ঝুঁকিহীন না; কিন্তু ধূমপানের চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকর। ভেপিংয়ে ধূমপানের তুলনায় ক্ষতির আশঙ্কা সামান্য এবং ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক; কারণ এতে শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় না।’ যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বিভাগরে সাড়া জাগানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ই-সিগারেট ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি প্রচলিত দাহ্য সিগারেটের তুলনায় শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ, ই-সিগারেট থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি নিতান্তই কম। এ বিষয়ে ধূমপানমুক্ত করার প্রচারাভিযানে যুক্তরাজ্যের করা রোডম্যাপে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ধূমপান বন্ধ করার এই অভিযান ‘ধূমপায়ী বিরোধী’অভিযান নয়। তাই পরিকল্পনায় বেশ গুরুত্ব পেয়েছে বর্তমান ধূমপায়ীরা, যারা হুট করেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারছে না। বরং নিকোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অভ্যাস বদলের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রচলিত সিগারেটে পাশে থাকা অধূমপায়ী ব্যক্তিও ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ বিষয়টিও উদ্বিগ্ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকারকে। আর এক্ষেত্রে ধূমপায়ী ব্যক্তিকেই ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে রোডম্যাপে। এনএইচএস জানিয়েছে, ভেপিংয়ের মাধ্যমে যারা সিগারেট ছাড়ছে তারা এখানেও সফল। কেননা এখন পর্যন্ত ভেপিংয়ের কারণে পাশের মানুষের ক্ষতি হয় না।
×