ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে কোরিয়ান সিনেমার দর্শক!

প্রকাশিত: ১২:২৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে কোরিয়ান সিনেমার দর্শক!

বাংলাদেশে বিদেশী চলচিত্র বলতে এতদিন পশ্চিমা এবং ভারতীয় সিনেমাকেই বোঝানো হতো। তবে প্রায় অর্ধযুগ ধরে ধীরে ধীরে হলিউড এবং ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে জায়গা করে নিচ্ছে কোরিয়ান সিনেমা। সিনেমা হলে নিয়মিত কোরিয়ান সিনেমা প্রদর্শনের চল এখনও দেশে শুরু হয়নি। তাই বলে এখন সিনেমা দেখা থেমে থাকবে নাকি? অনলাইনের নানা সাইট থেকে প্রতিদিনই কোরিয়ান সিনেমা ডাউনলোড হচ্ছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে। ডাউনলোডের সব উপায় যে বৈধ সেটা কিন্তু নয়। বৈধ অবৈধ যে উপায়েই দর্শক সিনেমা দেখুক না- নির্মাতার সার্থকতা সম্ভবত দর্শকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া! কিন্তু বাংলাদেশে কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোরিয়ান সিনেমা। কোরিয়ার বিনোদন জগত বেশ সমৃদ্ধ। কে- পপের আগে থেকেই কোরিয়ান সিনেমার স্বর্ণযুগের শুরু। একটা সময় এশিয়ার সিনেমার বাজারে চীন এবং হংকং সব দিক থেকে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশের জনসংখ্যা তাদের ছবিকে ব্যবসা সফল করে তুলত। তবে মানুষ সবসময় পরিবর্তন চায়। ভিন্নতা চায়। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, নতুন ধরনের গল্পের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যেটা চায় সেটা হলো নিজের চিন্তাধারার প্রতিফলন। সিনেমা দেখে দর্শক খোঁজে আত্মতৃপ্তি। কোরিয়ান পরিচালকরা সফল এখানেই। রুচি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত হলো অনন্যতা, সক্ষময়তা আর বাস্তবের মিশেল। জীবন-দর্শননির্ভর সিনেমায় দর্শক আবার খুঁজে পেতে শুরু করল নিজের জীবনে গল্প। ইতিহাসভিত্তিক ছবিতে পুরনো ইতিহাসকে জানতে শুরু করল নতুন এবং জীবন্ত স্বাদে। ব্যস্, কোরিয়ান সিনেমার পরাশক্তি হয়ে ওঠার গল্প শুরু এভাবেই। অনেক সিনেমাবোদ্ধা আবার ’৬০- এর দশকের ফ্রেঞ্চ ওয়েভের সঙ্গে তুলনা কওে কোরিয়ান সিনেমার এই উত্থানকে কোরিয়ান ওয়েভ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ’৯০-এর দশকে শুরু“ হলেও কোরিয়ান সিনেমার পরাশক্তি হয়ে ওঠা পরিপূর্ণ হয় এই শতাব্দীর শুরুর দিকে। এ্যাকশন, থ্রিলার বা রোমান্টিক যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটা টান দর্শককে সিনেমার সামনে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করে। কোরিয়ান সিনেমার আরেকটি অনন্য দিক হলো একই সিনেমায় অনেক রকম স্বাদ পাওয়া যায়। ইতিহাস বা যুদ্ধনির্ভর সিনেমাতেও যেন দর্শক খুঁজে পেতে থাকে নিজের জীবনকে। এক একজন চরিত্রের জায়গায় দাঁড়িয়ে কল্পনা করতে শুরু করে নিজেকে। সিনেমা সার্থক করে তুলতে আর কি চাই? বন্ধু মহলে সিনেমাখোর হিসেবে পরিচিত ঐশীক সামি। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত এই সিনেমাখোর জানালেন তিনি কেন কোরিয়ান সিনেমার দিকে ঝুঁকছেন। ‘প্রচুর বলিউড সিনেমাই কোরিয়ান সিনেমার অনুকরণে বা সরাসরি একই ঘটনা বা একই চিত্রনাট্য দিয়ে তৈরি। কোন কোন ক্ষেত্রে এটাকে নকল বা রিমেক বলা চলে। মানুষের চিন্তা-ভাবনা উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যে কোন কিছুর উৎসের দিকে যাবা চেষ্টা করে। আমার কোরিয়ান সিনেমা দেখার শুরুও এভাবে। বলিউডের সিনেমা কোন কোরিয়ান সিনেমা থেকে নির্মিত হয়েছে জেনে প্রথম দেখা শুরু করি। তা ছাড়া একটা মৌলিকতা তো আছেই’ জানালেন তিনি। দুর্দান্ত পরিচালনা, অসাধারণ অভিনয়, চোখ ধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি আর চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে ২০০৩ সালে আসল ‘ওল্ডবয়’, ‘মেমোরিজ অব মার্ডার।’ কোরীয় সিনেমার বিপ্লবের পূর্ণতা ওই বছর থেকেই। কোরিয়ার যুদ্ধ এবং দুই কোরিয়ার বিরোধ নিয়ে নির্মিত হয় ‘নরদান লাইন লিমিট’, ‘ইনটু দ্য ফায়ার’, ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড ৬২৫’, ‘দ্য ফ্রন্ট লাইন’। যুদ্ধের ধুরন্ধুমার এ্যাকশনের মধ্যেও দর্শক কোথায় যেন খুঁজে পেল মানবিকতা। জাপানীদের ৩০০ জাহাজ নিয়ে মকোরিয়া আগ্রাসন এবং মাত্র ১২টি জাহাজ দিয়ে তা ঠেকিয়ে দেয়া নিয়ে নির্মিত হলো ‘দ্য এ্যাডমিরাল’। নৌযুদ্ধের অন্যতম সেরা সিনেমা এটি। বলতে হবে আ ফিল্ম টু রিমেম্বার, ট্রেন টু বুসান, মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেনের কথাও।তারুণ্যের কাছে এখন হলিউড বলিউডের পরেই কোরিয়ান সিনেমার জয়জয়কার। তারুণ্যের প্রত্যাশা অচিরেই আমাদের প্রেক্ষাগৃহে কোরিয়ান সিনেমার ঘ্রাণ পাবে তারা।
×