ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩৬ সরকারী মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

৩৬ সরকারী মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক সঙ্কট

নিখিল মানখিন ॥ শিক্ষক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের ৩৬ সরকারী মেডিক্যাল কলেজ। দেশের শতকরা ৭৭ ভাগ সরকারী মেডিক্যাল শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব মেডিক্যাল কলেজে ৫৫৮২ জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ১৩০৩ জন। শিক্ষক সঙ্কটে মেডিক্যাল শিক্ষাদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরির পরিকল্পনা। আর কর্মরত সরকারী শিক্ষকদের অনেকেই বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষাদানসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকেন। ফলে সরকারী কলেজগুলোর স্বাভাবিক শিক্ষাদান আরও বেশি ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হবে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যাদের ডিও হয়ে গেছে তাদের প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। প্রমোশন দিলে তারা শিক্ষক হতে পারবেন। শিক্ষক নিয়ে যে সঙ্কটের মুখে পড়েছে মেডিক্যাল কলেজগুলো শনাক্ত করে শীঘ্রই তার সমাধান করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব সরকারী মেডিক্যাল কলেজেই শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। নতুন কয়েকটি কলেজ স্থাপন হওয়ায় তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। ৩০ মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে এই সঙ্কট চরমে। বিশেষ করে মৌলিক বিষয় পড়ানোর শিক্ষক নেই। এ অবস্থায় পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়ে গত বছরের শেষ দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমস্যার সুরাহা হয়নি। জানা গেছে, পুরনো ৮ মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া অন্যগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ করে মৌলিক বিষয় এ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন ও কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে শিক্ষক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। আর ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ১৪ মেডিক্যাল কলেজে এ সঙ্কট আরও তীব্র। শিক্ষক সঙ্কটের শীর্ষে রয়েছে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ। মাত্র ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন এ প্রতিষ্ঠানে। মেডিক্যাল কলেজটিতে ফার্মাকোলজি বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই। এ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে রয়েছেন একজন করে সহকারী অধ্যাপক। ফিজিওলজি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং দু’জন লেকচারার রয়েছেন। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে একজন করে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ জন করে শিক্ষক রয়েছে সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে। টাঙ্গাইল মেডিক্যালে ১৮ জন, জামালপুরে ১৯ জন, কুষ্টিয়ায় ২০ জন এবং শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল, পাবনা মেডিক্যাল কলেজে ২১ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। মুগদা মেডিক্যাল কলেজে ২৩ জন, রাঙ্গামাটি ও মানিকগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ২৫ জন করে, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে ২৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। কক্সবাজার ও যশোর মেডিক্যাল কলেজে ৩২ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। এসব মেডিক্যাল কলেজে অনেক বিভাগে অধ্যাপক নেই। খুলনা মেডিক্যালে ছয় ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬১। সেখানে ১৯টি বিষয়ে কোন অধ্যাপক নেই। নয়টি বিষয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক থাকলেও, চারটি বিষয়ে তাও নেই। ২৩ অধ্যাপক পদের বিপরীতে ৪ আর ৪৪ সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ৮ জন। পাবনা মেডিক্যাল কলেজে ফিজিওলজি, এ্যানাটমি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ চলছে মাত্র একজন প্রভাষক দিয়ে। মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশের ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষকদের। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল খান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ত্রয়ী প্রশাসনে তখনও ছিল, এখনও আছে। ত্রয়ী প্রশাসন মানে, বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) কোর্স কারিকুলাম করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নীতি ও বদলি করে থাকে এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নিয়ে তারা সনদ প্রদান করে। ত্রয়ী প্রশাসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দরকার ছিল।
×