ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণাঞ্চলে সুবিধাজনক অবস্থানে ছয় প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

দক্ষিণাঞ্চলে সুবিধাজনক অবস্থানে ছয় প্রার্থী

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আসনভিত্তিক জয়-পরাজয়ের হিসেব কষছেন দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নিয়ে জয়-পরাজয়ের হিসেব অনেকটা বাস্তব বলে মনে করছেন তৃণমূলের ভোটাররা। ব্যক্তি ইমেজ, রাজনৈতিক অবস্থান ও অতীতের হিসেব অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীকে হারানো অনেক কঠিন হয়ে পরবে প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের জন্য। এদেরকে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক ও উন্নয়নের রূপকার বলে গণ্য করছেন সাধারণ ভোটাররা। পাশাপাশি বিগত মন্ত্রীসভায় এরা ছিলেন ক্ষমতাধর মন্ত্রী। আবার কেউ ছিলেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ। এছাড়া অনেক দফতরের চেয়ারম্যান হিসেবে মন্ত্রী পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন অনেকে। মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের বাহিরে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওই প্রার্থী বিগত বছরগুলোতে নিজস্ব অর্থায়নে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা মহাজোটের প্রার্থীরা হলেন-আমির হোসেন আমু। বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। তাকে বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। দক্ষিণাঞ্চলে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে বেশিবার তিনি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে তার সবগুলোতে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমির হোসেন আমু। একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ আমির হোসেন আমু মোট ১০ বার প্রতিদ্বন্ধিতা করতে যাচ্ছেন। বিগত নির্বাচনগুলোর প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আমির হোসেন আমু পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে দুবার পেয়েছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব। আমির হোসেন আমু ১৯৭০ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বরিশাল সদর আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পরিষদেও নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। তখন তিনি ঝালকাঠী-২ (সদর-নলছিটি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসনে ৭৯, ৮৬, ৯১ ও ৯৬ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৯৮ সালে ঝালকাঠী-২ এর উপনির্বাচনে আমির হোসেন আমু এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও তিনি পরাজিত হন। ২০০৮ সালে ঝালকাঠী-২ আসন থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে এবং ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় আমির হোসেন আমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে ঝালকাঠী-২ এর পাশাপাশি বরিশালের বানারীপাড়া ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী সংসদীয় আসনে এবং ১৯৯৬ সালে ঝালকাঠী-২ এর সঙ্গে ১ আসনেও প্রতিদ্বদ্বীতা করেছিলেন আমির হোসেন আমু। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠী-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা আমির হোসেন আমুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং অতীতের জয়গুলো নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও বর্ষীয়ান এ নেতার জয়ের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তোফায়েল আহমেদ। বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। তাকেও বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। তিনিও একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ ১০ বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। অতীতের নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ ৭ বার বিজয়ী হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকবারই পেয়েছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহম্মেদ। তিনি দ্বীপজেলা ভোলা-১ (সদর) থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন ১৯৭৩, ‘৯১, ‘৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ভোলা-২ আসন থেকে। ওই আসন থেকে ৯১ ও ৯৬ সালেও বিজয়ী হন তোফায়েল আহমেদ। অর্থাৎ ওই বছরগুলোতে তিনি দুটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ভোলা-১ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং অতীতের জয়গুলো নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন ওই আসনের প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীরা। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বর্তমানে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান (মন্ত্রী), আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তাকেও বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম একজন রাজনৈতিক অভিভাবক। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে। তার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন স্বাধীন বাংলার প্রথম মন্ত্রী পরিষদের একজন সফল মন্ত্রী। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৭ বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরমধ্যে তিনি বরিশাল-১ আসন থেকে ৩ বার নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই পার্বত্য শান্তি চুক্তির রূপকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-১ আসনে লড়ছেন। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তায় নৌকার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হওয়ায় তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা মহাচিন্তিত রয়েছেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বর্তমানে পানি সম্পদমন্ত্রী। জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সভাপতি। তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকবারই পেয়েছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব। পিরোজপুর-২ আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেম্বর অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর-২ আসনে লড়ছেন। অতীত জয়ের পরিসংখ্যানে তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা চিন্তিত রয়েছেন। আ.স.ম ফিরোজ। বর্তমানে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তিনি পটুয়াখালী-২ এবং তৎকালীন পটুয়াখালী-৬ আসন থেকে ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকবারই পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তিনি ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেম্বর অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালী-২ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ওই আসনে তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরাও তাদের জয় নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। এককভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের বাহিরে প্রথমবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের পাড়া মহল্লায় ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি ছুটছেন ভোটারদের সমর্থন পেতে। বিগত দিনে নিজস্ব অর্থায়নে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডর ফিরিস্তি তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে আগামী ৩০ তারিখে ‘ট্রাক’ মার্কায় ভোট প্রদানের আহবান করছেন আতিকের সমর্থকরা। আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকান্ড এ আসনে আমি ব্যাপক অবদান রেখেছি। সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে প্রতিনিয়ত পাশে থেকেছি। যে কারণে দল মতের উর্ধে থেকে ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ‘ট্রাক’ প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন বলে আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী।
×