ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ভাগ্যের চাকা ঘুরল স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আজাহারের

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২০ অক্টোবর ২০১৮

  অবশেষে ভাগ্যের চাকা ঘুরল স্বেচ্ছাসেবী  ট্রাফিক  আজাহারের

নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দা ফেরিঘাট চৌরাস্তার মোড়। এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারীর অনেকেই আজাহার আলীকে চেনেন, জানেন। কারণ দীর্ঘ এক যুগ ধরে মান্দার ফেরিঘাট চৌরাস্তায় পুলিশের পুরনো রংচটা পোশাক পরে স্বেচ্ছায় ট্রাফিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয়রা আজাহার আলীকে ট্রাফিক আজাহার নামেই চিনেন। অনেকের কাছে আবার প্রিয় আজাহার ভাই। এর আগে পাশের উপজেলা মহাদেবপুর ব্রিজের মোড়ে ৮ বছর এ সেবা প্রদান করেছেন আজাহার আলী। অবশেষে ২০ বছর পর ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে স্বেচ্ছাশ্রমের ট্রাফিক আজাহার আলীর। ইতোমধ্যে নওগাঁ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা ও একসেট নতুন পোশাক প্রদান করেছেন তাকে। একই সঙ্গে দুই রুম বিশিষ্ট একটি ইটের বাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা। বাড়িটির নামকরণ করা হবে ট্রাফিক হাউস। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে রেশন ও চিকিৎসাসেবার। এছাড়া ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান এক লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র (এফডিআর) উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজাহার আলীকে দেখলে মনে হতে পারে একজন পুলিশ সদস্য। কিন্তু আজাহার আলী কেবলই একজন স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক। তিনি পুলিশের চাকরি করেন না। দিনভর সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও নির্বিঘেœ চলাচলে সহযোগিতার কাজ করেন তিনি। কখনও কখনও বাঁশিতে হুইসেল বাজিয়ে শিক্ষার্থী, নবীন-প্রবীণসহ সব বয়সের পথচারীকে সড়ক পারাপারে সহযোগিতা করছেন তিনি। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়-ঝাপটা মাথায় নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। ছেঁড়া শার্ট-প্যান্ট ও ছেঁড়া জুতা পরেই কাজে নামতে হয় আজাহারকে। টুপি বাঁশিও অনেক পুরনো। এগুলো ছাড়া আর কোন পোশাকও নেই তার। তাই একই পোশাক ঘুরে ফিরে পরতে হয়। তাতে আক্ষেপ নেই দরিদ্র আজাহারের। কারণ একটাই, তা হলো ‘নিরাপদ সড়ক’। একান্ত আলাপকালে আজাহার আলী প্রতিবেদককে বলেন, ২০ বছর আগে মহাদেবপুর ব্রিজের পাশে একটি সড়ক দুর্ঘটনা দেখেছিলেন। ওই ঘটনায় হতাহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার কাজটি করেছিলেন। নিহতের মরদেহ পাহারা দিয়েছেন। এরপরই আর ঠিক থাকতে পারেননি। ঘটনার পরদিন থেকেই সেখানে আনছারের পোশাক পরে নিজের কাঁধে তুলে নেন ট্রাফিকের দায়িত্ব। এর বিনিময়ে তিনি সহযোগিতার জন্য কারও কাছে হাতও পাতেন না। তবে কেউ কেউ ২-৫ টাকা করে বকশিশ দিয়ে থাকেন। এতেই আজাহার খুশি। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×