ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি-বাংলা সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৮

সৌদি-বাংলা সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উভয় দেশই। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষেত্রে সহায়তার বিষয়ে উভয় দেশ অনেকটা পথই পাড়ি দিয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে সৌদি আরব তাদের পুরনো অনেক ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এনেছে। রক্ষণশীল সমাজের খোলস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সামাজিক সংস্কারেরও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি মাঝপথে বাধা পড়েছে তেল রফতানিতে দাম কমে যাওয়ায়। বাংলাদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সম্পর্ককে গভীর বন্ধনের পথে এগিয়ে নিতে সবসময় সচেষ্ট। তাই সৌদি আরবের আমন্ত্রণে সে দেশের সরকারের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সামরিক জোটে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে। এই জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলনে মাসব্যাপী এক বিশাল যৌথ সামরিক মহড়ার সমাপনী অনুষ্ঠান ‘আল জুবাইলে গলফ শিল্ড’ শীর্ষক এই কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন। উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় বন্ধু দেশগুলোর প্রতিরক্ষা সমন্বয় ও সহযোগিতায় সৌদি আরব মাসব্যাপী এ সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল। ২৪টা দেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে প্রচলিত ও অপ্রচলিত দু’ধরনের সামরিক মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক অংশ নেয়। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন বৈরী কর্মকা- প্রতিরোধে যৌথ সামরিক অভিযান পরিকল্পনার ধারণা কার্যকর করা হচ্ছে এই মহড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ও এতে ব্যবহৃত অস্ত্রের গুণগত মানের নিরিখে এটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে বৃহত্তম সামরিক মহড়া হিসেবে বিবেচিত হয়। সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ প্রথম কাতারে থাকলেও পণ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে পিছিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আমদানি করছে বেশি। কিন্তু রফতানি অনেক কম। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশ সৌদি বাজারে তার পণ্য নিয়ে প্রবেশে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ দেশটি হতে পারে বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রফতানিযোগ্য তেমন কোন পণ্য সৌদিরা নিচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী সে দেশে কর্মরত। সে দেশের ছোট ছোট ক্ষেত্রে তারা কাজ করছেন। সুতরাং সে দেশে বাণিজ্য বাড়াতে হবে বিনিয়োগ ও পণ্য রফতানির মাধ্যমে। বাংলাদেশের উচিত সে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণ। শাক-সবজি মাছ-মাংসসহ হালাল খাবার উৎপাদন বিশ্বে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়-চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সৌদি আরবে তা রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরকালে পনেরোাটি খাত সামনে রেখে তারা বাংলাদেশী পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ২৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনে সমঝোতা স্মারক সই হয়। অন্যান্য খাতেও চুক্তি হয়েছে। এসব বাস্তবায়নে এখন বাংলাদেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারী খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের একটি প্রস্তাবও রয়েছে সৌদিদের। ভোলাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ফসফেট সার কারখানা গড়তে চায় তারা। আবার একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি কাগজ কল, বিদ্যুত কেন্দ্র, সৌর প্যানেল ও সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্যখাতেও বিনিয়োগ করতে চায়। কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি করতে চায়। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করা উচিত। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব বিষয় তুলে ধরেছেন। দু’দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হোক আরও বিস্তৃত সেটাই কাম্য।
×