ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ আলোচনায় যখন রেইন ট্রি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৫ মে ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ আলোচনায় যখন রেইন ট্রি

নামখানা চমৎকার- রেইন ট্রি। স্বদেশী গাছ কিন্তু বিদেশী নাম। এহেন বৃষ্টিবৃক্ষের নিচে শুধু পানীয় নয়, আরও অনেক কিছুই খাওয়া হয়। পকেটে যেহেতু টাকার হাহাকার নেই, বরং কড়কড়ে নোটের বাহারি গন্ধে অনেককেই তারা ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে যায় সেই সরাইখানায়। সেখানে পানের পাশাপাশি নারীর সম্ভ্রম নিয়েও টানাটানি করে ওরা। বিদেশী নাটক-নভেলে ‘পাব’ বা রাস্তার পাশের পানশালার চিত্র দেখেছি। সেখানে পানটান হয়, কিন্তু কারও পরনের পোশাক নিয়ে টানাটানি করে না কেউ। একটা সময় ছিল, যখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করি বলে আক্ষেপের অন্ত ছিল না। অথচ এখন চরিত্রসীমার নিচে বাস করেও এতটুকু লাজলজ্জার বালাই নেই! ঘটনার কয়েকদিন পর রেইন ট্রি কর্তৃপক্ষ এই মর্মে বগল বাজাতে শুরু করে, সেখানে আদতে তেমন কিছুই ঘটেনি। যা কিছু ঘটেছে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। একেই বলে শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল। বা বলা যায়, এটা একটা চক্র। মিলেমিশে এসব দুষ্কর্ম করে বেড়ায় দুর্ধর্ষ এই সিন্ডিকেট সদস্যরা। সোনার ছেলেরা বাপের পকেট কেটে বা তার সদয় প্রশ্রয়ে বৃষ্টিবৃক্ষের তলায় এসে মিলিত হয়। তারপর এককাট্টা হয়ে ড্রাইভার, বডিগার্ড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নারীর ওপর। মানবতাকে নস্যাৎ করে লুটে নেয় নারীর সম্ভ্রম। প্রশ্ন হলো, এমন বিষবৃক্ষ কি শুধু একটি বা দুটি! বাস্তবে এ জাতীয় সরাইখানা শহরে আরও অনেক আছে। সেখানে নিত্য রাতে ওরা লুকোচুরি খেলে। টাকার মোড়কে ঢেকে দেয় ছোট-খাট অন্যায়-অপরাধ। মিডিয়া তা জানতে পারে না, ফলে লোকলজ্জার ভয়ে, বা নিরুপায় হয়ে অসহায় নারী মুখ বুজে সব মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই সিন্ডিকেটে শুধু নারী নয়, ধরা দেয় আরও অনেক কিছু। চোরাকারবার তার অন্যতম। নইলে এমন অবলীলায় টাকা ওড়াবার সময় ওদের আসে কোত্থেকে! এরা কি ঠিকঠাক আয়কর দেয়! প্রশ্নই আসে না। অবৈধ ইনকাম ছাড়া কি অন্যায় সুযোগ নেয়া যায়! এখন সময় এসেছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব অশুভ আস্তানা ভেঙ্গে ফেলার। কেবল মিডিয়া নয়, এই দায়িত্ব আমাদের সবার। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীই যদি মুক্তবাক কিংবা মুক্তপ্রাণ চলাচল করতে না পারে, তাহলে উন্নয়ন কীভাবে হবে! কাউকে সাপে কাটলে মিছে রোগীর দোষ না দিয়ে ওঝা ডাকার ব্যবস্থা করা ভাল। সেই সঙ্গে সাপ যাতে তার সদন্ত বের করে পুনর্বার কাউকে আহত করতে না পারে, তাই সবাই মিলে সাপটিকে জনসমক্ষে এনে তার বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। আমরা আর কোন রেইন ট্রি দেখতে চাই না। বিষবৃক্ষগুলোকে অচিরেই উপড়ে ফেলা হোক। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×