ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

থমকে আছে বিদ্যুতের ১১ প্রকল্প ॥ সংশ্লিষ্টদের অনীহা আর গাফিলতিই মূল কারণ

কয়েক বছরেও আলোর মুখ দেখল না

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২২ মার্চ ২০১৭

কয়েক বছরেও আলোর  মুখ দেখল না

রশিদ মামুন ॥ চট্টগ্রামের কাপ্তাই এলাকায় মাত্র পাঁচ মেগাওয়াটের একটি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় পাঁচ বছর আগে। প্রকল্পটি সরকার অনুমোদন করে অর্থায়নের ব্যবস্থাও করে দেয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘরে অগ্রগতি দেখানো হচ্ছে শূন্যভাগ। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এজন্য সব ধরনের সহায়তাও করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) পাঁচ বছরেও ছোট্ট প্রকল্পের অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের এমন ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলোর বয়স দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। সবগুলো প্রকল্পের অর্থায়নও নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে মন নেই সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অনীহা আর গাফিলতির কারণেই থমকে আছে ১১ প্রকল্প। জানতে চাইলে কাপ্তাই পাঁচ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের পরিচালক ফারুখ আহমেদ কথা বলতেই নারাজ। তিনি জানালেন, এসব বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ রয়েছে তার। তিনি শুধু জানালেন, প্রকল্পর কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি শূন্যভাগ হলেও গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, খোদ রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বঙ্গভবন ও গণভবনের জন্য পৃথক সুইচিং স্টেশন করার নির্দেশ দেয়া হয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ডিপিডিসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারী কোষাগার থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়। আশা করা হয়েছিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে ডিপিডিসি। সরকারকে হতাশই করেছে বিতরণ কোম্পানিটি। প্রকল্পের পরিচালক এখনও নাকি জমিই যোগাড় করতে পারেননি আর বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি ঠিকমতো দেখভালও করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভবন এবং গণভবনে পৃথক সুইচিং স্টেশন করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হবে। কোন কারণে স্থানীয় ফিডারে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে ভোগান্তি পোহাতে হবে না রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে। পৃথকভাবেই তাদের বিদ্যুত বিতরণ করার জন্য সুইচিং স্টেশন করার পরিকল্পনা করা হয়। এখনও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু থাকলেও ব্যবহার করা হয় গণসুইচিং স্টেশন। এতে নিরাপত্তাও খানিকটা বিঘিœত হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পটিও পাত্তা দেয়নি ডিপিডিসি। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগের ১১ প্রকল্পের পর্যালোচনায় পদে পদে প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা আর ব্যর্থতার সঙ্গে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের অনীহার কথা উঠে আসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জবাব দিতে পারেননি। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ১১ প্রকল্পের মধ্যে এককভাবে পাঁচটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে ডিপিডিসি। এসব প্রকল্পের বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে। কাজ শেষ তো দূরের কথা, বিদ্যুত বিভাগের সংক্ষিপ্ত তালিকায় বলা হয়েছে, কোন প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। বঙ্গভবন ও গণভবনের প্রকল্প ছাড়াও এখানে কোম্পানির নর্থ ও সাউথ জোনে বিতরণ এলাকা সম্প্রসারণ, মোট ১১টি বিতরণ জোনে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের জন্য মোট দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরমধ্যে প্রথম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ডিসেম্বরে। কিন্তু চার বছর অতিক্রান্ত হলেও এক ফোঁটা কাজ হয়নি। অন্য প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। প্রকল্প গ্রহণের পর দুই বছর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি সেই শূন্যের কোটায়। এছাড়া বিতরণ কোম্পানিটির সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পও থমকে আছে। ডিপিডিসির পরই চার প্রকল্প নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে মন্ত্রণালয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কাপ্তাইয়ের পাঁচ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়াও ঘোড়াশাল তিন নম্বর ইউনিট রি-পাওয়ারিং (কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করে ক্ষমতা বৃদ্ধি), রংপুর জোনের বিদ্যুত উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প চলছে ধীরগতিতে। মানসম্পন্ন বিদ্যুত সরবরাহ দিতে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার বদলে ফেলার জন্য আরইবিকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রকল্পটিও বাস্তবায়নের ধীরগতির ১১ প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে। একসঙ্গে ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করার পৃথক প্রকল্প নিয়েছে আরইবি। সারাদেশে আরইবির ওভারলোড সমস্যা গ্রাহককে সবচেয়ে বেশি ভোগায়। বিদ্যুত থাকলেও গ্রাহক বিদ্যুত পায় না ওভারলোডজনিত সমস্যার কারণে। এসব ফিডারে ফোর্স লোডশেডিং করতে হয়। বাস্তবায়ন ধীরগতির প্রকল্পে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) একটি প্রকল্প রয়েছে। ডেসকো এলাকায় ১৩২/৩৩/১১ কেভির সাব-স্টেশনটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩০ জুন। কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ চার বছর অতিক্রান্ত হলেও ১৪ ভাগের বেশি অগ্রগতি নেই।
×