ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তারপরও লোডশেডিং

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১ অক্টোবর ২০১৬

তারপরও লোডশেডিং

২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুত খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছেÑ এটি সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন। দেশে এখন বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। একের পর এক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে আসছে সরকার। প্রতিবেশী দেশ থেকেও আসছে বিদ্যুত। তারপরও কমছে না লোডশেডিং। শিল্প কারখানায় নেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে দেশের কোথাও তার কোন সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। কোন কোন স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে না। ছোট-বড় প্রায় সব শহরের পরিস্থিতিও আশানুরূপ নয়। খোদ রাজধানীর অভিজাত এলাকাখ্যাত গুলশান-বনানী-ধানম-িতেও লোডশেডিংয়ের নামে কখনও বা সংস্কারের নামে দিনে একাধিকবার বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটছে। ঢাকার কোন এলাকায় যখনই বিদ্যুত থাকে না, তখনই মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা শোনা যায়। শোনা যায়, সঞ্চালন ও বিতরণ-ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কথাও। দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পড়াশোনা, চিকিৎসা, কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশে এত বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে, বিদ্যুত যায় কোথায়। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে উৎপাদনও। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে। কমেছে লোডশেডিং। সার্বিক বিবেচনায় বিদ্যুত খাতে সরকার সাফল্য দেখিয়েছে। ২০০৯ সালের আগে দেশের ২৭টি বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। এখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে দেশ। ৭৬ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুত সেবা পাচ্ছে। কোন কোন স্থানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনের যাত্রাপথ আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও চলছে। দেশে মোট দুই লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে। এসব লাইনের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জরাজীর্ণ। ডিপিডিসির বিতরণ লাইনের দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮০০ কিলোমিটার লাইন চরম নাজুক। আরইবির বিতরণ লাইনগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। একটানা দীর্ঘ সময় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধসহ ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে প্রতিদিন বিতরণ ব্যবস্থায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এসব সমস্যা সামনে রেখে স্বস্তিদায়ক বিদ্যুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব। বিদ্যুত ও জ্বালানি একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য অতীব জরুরী। দেশের কৃষি, শিল্পসহ প্রতিটি উৎপাদনশীল সেক্টরে বিদ্যুত অপরিহার্য একটি উপাদান। বিদ্যুত সঙ্কটের কারণে বিনিয়োগ ব্যবস্থাও সম্প্রসারিত হয় না। অতীতে এর যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। তবে যেভাবে বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে তাতে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে, উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যা শিল্পায়নের জন্য সুখবর। দেশে পর্যাপ্ত কয়লা খনি রয়েছে। জনগণের স্বার্থে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রও করা যায়। বর্জ্য ও আবর্জনা থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত উৎপাদনের কথা মাঝেমধ্যে শোনা যায়। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে এগোতে পারলে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এসব গেল সম্ভাবনার কথা। বর্তমানের যে সঙ্কট তার সমাধান আগে দরকার। এই মুহূর্তে লোডশেডিংয়ের যে মহড়া চলছে তার পরিত্রাণের ব্যবস্থা কি হবে ভাবা দরকার। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনÑ এই প্রত্যাশা সবার।
×