ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাগুক বিবেক

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৪ আগস্ট ২০১৬

জাগুক বিবেক

আজকাল প্রায়ই বলতে শোনা যায় নারীরা নাকি পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার ভোগ করে। দেশে বহু নারী সংগঠন নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। খুলে দিচ্ছে অর্থনীতির বেড়াজাল। তা সত্ত্বেও এটা অস্বীকার করা যায় না যে, নারীরা এখনও শতভাগ মুক্ত হতে পারেনি। এক ধরনের পৈশাচিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনও নারীকে তাড়া করে ফেরে। বহু পরিবারে শারীরিক নির্যাতনের শিকার এখনও নারীরা। মানুষ কতটা বর্বর ও পিশাচ হলে অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারতে পারে! এগুলো কোন রসভরা কথা নয়। প্রতিদিনকার পত্র-পত্রিকা খুললেই লক্ষ্য করা যায় নারীরা আজও আঘাতগ্রস্ত হচ্ছেÑ হাতুড়ি, বঁটি, ছুরি, কাঁচি, দা ইত্যাদি দ্বারা। কিংবা যৌতুকের দায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শুধু কি তাইÑ কাজের মেয়েকে ধর্ষণ, শ্রমের ঠিক মজুরি না দেয়া, হত্যা, মানবাধিকার হরণ যেন নিত্য ঘটনা। সব পুরুষ যে এর জন্য দায়ী তা নয়। দায়ী করছি কেবল তাদেরই, যাদের জন্য আমাদের পুরুষ সমাজ আজ দূষিত। নারীর পাশাপাশি শিশুরাও কম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। শিশুরা আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন। স্বাভাবিকভাবেই জাতির পরিচালনার দায়িত্ব তাদের হাতে ন্যস্ত হবে। কিন্তু অনাদর-অবহেলায় অধিকাংশ শিশু আজ অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছে। এদেশের শতকরা ৯০ জনই প্রাথমিক স্কুলে যায়। আবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার আগেই অর্ধেকের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পরবর্তীতে এসব শিশুর অধিকাংশই শ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। শহরে শিশুরা প্রায় ২০০ ধরনের অর্থনৈতিক কাজে জড়িত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ কুলি, হকার, বিড়ি শ্রমিক, ঝালাই কারখানার শ্রমিক, ইটভাঙ্গা, অফিস আদালতে খাবার পৌঁছানো ইত্যাদি। অন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও এদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য দেখা যায়। এরা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। ঠিকমতো বেতন পায় না, শারীরিক শক্তির তুলনায় বেশি কাজ করানো হয়। আরও কত কী? ব্যাপক দরিদ্রতা, জনসংখ্যার উর্ধগতি, অশিক্ষা ও কুসংস্কারের কারণে আজ এ বেহাল দশা। নারী ও শিশু নির্যাতন মারাত্মক অপরাধ। এদের অবহেলা ও নির্যাতন করার মধ্য দিয়ে সমাজ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তাদের ওপর চালানো অমানবিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে অভিশপ্ত এক অন্ধ সমাজ বেড়ে উঠছে। তবে এখনও কোন কিছু শেষ হয়ে যায়নি। দেশে রয়েছে আইনকানুন। প্রয়োজন শুধু তার যথাযথ প্রয়োগ। শিশু আইন-১৯৭৪ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ বলবত থাকলেও এর মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকাংশে নির্র্মূল করা সম্ভব। সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি দরকার সমাজ কল্যাণমূলক সংস্থাগুলোর অগ্রণী ভূমিকা ও জনসাধারণের সচেতনতা। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×