ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জগলুল কবির চৌধুরী

পরিবার থেকে শিক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পরিবার থেকে শিক্ষা শুরু

গুরুজনের বা সন্মানিত ব্যাক্তির জন্য শ্রদ্ধাবোধ- ভালবাসা থাকলে তা নিজের কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যতটুকুই হোক কোন বড় বা ছোট যা দিয়েই এর বহি:প্রকাশ ঘটুক তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এর মাঝে কতটুকু আন্তরিকতা আছে, কতটুকু শ্রদ্ধাবোধ আছে । এ দুটো থাকলে উপস্থাপনাও সুন্দর-শ্রদ্ধার হয়। কোথায়ও বেড়াতে গেলে তাদের আন্তরিকতাটাই অনুভুত হয়, সামর্থ্যরে মধ্যে আপ্যায়নতো সবাই করে। আর এমন বহি:প্রকাশকেই ভদ্রতা বলে। আমাদের সামাজিক ধারায় এটাকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। তার অনেক প্রয়োজনও আছে। কারন এগুলো হলো সত্যিকারের শিক্ষা যা মানুষ পরিবার থেকে শিখে। যাকে বলে পারিবারিত শিক্ষা। আমাদের সামাজিকভাবে চলার পথে বিশেষ করে বিভিন্ন পাবলিক জায়গায় লেখা থাকে “ব্যবহারেই বংশের পরিচয়”। অর্থাৎ আমাদের আচরনই বলে দেয় আমার পারিবারিক অবস্থান কেমন ছিল। কিন্ত বর্তমান আমাদের সমাজের মধ্যে মানুষের মূল্যায়ন মানুষের আচার-ব্যবহার, ভদ্রতা-নর্মতা,মেধা-বুদ্ধি এ দিয়ে হয় না। স্রেফ টাকা ও ক্ষমতার মাঝে চলে গিয়েছে। এদুটো জিনিষ মানুষকে ভোগ ও প্রকাশে মত্ত করে দেয় যা মানুষের স্বভাবজাত চরিত্র। কিন্ত এতকিছুর পরও আমাদের সমাজের প্রচলিত কথা গুলো মানুষের জীবনের চলার পথে অনেক গুরুত্ব রাখে, জীবন থেকে বলা কথা কখনও ভুল হয় না বরং শত শত বছর তা আমাদের পথ চলতে সহায়তা করে। তাই এ কথাগুলো আমাদের জীবনে চলার পথে আমলে নেয়া দরকার। শুধু টাকা ও ক্ষমতা দেখে যদি কেউ কারো সাথে পারিবারিক বা ব্যাক্তিগত কোন সম্পর্কে জড়ায় তবে সে এমন জায়গায় কখনই সন্মানিত হবেন না, সুখিও হবেন না। জীবনতো একটাই , এখানে বড় কোন ভুল হলে সারা জীবন তার দায় পোহাতে হয়। পারিবারিক সম্পর্কের জন্য পারিবারিক ঐতিহৃ দেখার প্রয়োজন আছে। একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে সাধারনত মৌলিক কিছু গুনাবলি থাকে যা অর্থ বা একাডেমিক সার্টিফিকেট থেকে আসে না, এটা আসে পরিবার থেকে। তাই আমাদের পরিবার থেকে আমরা সবাইকে কি শিক্ষা দিতে পারছি সেদিকে সবার সুনজর দেয়া খুব প্রয়োজন। বিশেষ করে এমন ডিজিটাল যুগে শহর বা গ্রাম সব পরিবারেরই সন্তানদের সু-সন্তান করার প্রচেষ্টা রাখা দরকার। নিজের সন্তানদেরকে আদব-কায়দা শিখানো প্রয়োজন আছে। আর তার প্রথম পদক্ষেপ হলো বড়দের দেখলে সালাম দেয়া। বাড়ীতে মেহমান আসলে বাচ্চাদের দিয়ে মেহমানদের খোজ-খবর ও দেখবাল করান। তাতে সন্তানরা অন্যকে শ্রদ্ধা করার মানষিকতায় গড়ে উঠবে। সন্মান ও শ্রদ্ধার সাথে আপ্যায়ন করার ব্যবস্থা করা। উপস্থাপনার মাঝে ভদ্রতার ছাপ থাকে তার খেয়াল করে সন্তানদের গড়ে তোলার দায়িত্ব সংসারের বড়দেরই থাকে। এ যে শিক্ষা তা আজকের শিশুদের হৃদয়ে দাগ কেটে থাকবে। যা ভবিষ্যতে ওদের আচার-ব্যবহারে ফুটে আসবে। তার জীবনের চলার পথের সবাই বুঝতে পারবে সে একজন কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। এগুলোই হলো একেকটি পরিবারের পরম পাওয়া। একবার এক ক্লাব বন্ধু তার নুতন অফিস, যেটা বেশ ভাল মানের সাজসজ্জা করেছে। সেখানে ক্লাবের সবাইকে সাপ্তাহিক মিটিং করার জন্য আহবান জানালেন, সাথে ইফতারের দাওয়াত। যেহেতু ক্লাব, এখানে বয়সে বড়-ছোট সবাই বন্ধুর মত। অনেকেই কষ্ট করে চারতলায় সিড়ি দিয়ে উঠে অফিসে গেলেন কারন তখনও লিফট লাগানো হয় নাই। যথারীতি মিটিং শুরু হলো কিন্ত হোস্ট লাপাত্তা। ওনাকে পাওয়া যাচ্ছে না, ফোনেও না। যদিও খাবারের সব আয়োজন ছিল, অফিসের কর্মচারিরা সব করল কিন্ত উনি ফোন করেও একবার বলার প্রয়োজন বোধ করল না যে, আমি কোন কাজে আটকিয়ে পরেছি বা কোন ঝামেলায় পরেছি , আপনারা দয়া করে মিটিং সেরে ইফতার করে নিন। সবাই মিটিং করল, ইফতার বাধ্য হয়ে করল কিন্ত অনেক অপমান ও অস্বস্থিবোধও করল। অথচ উনি উচ্চ শিক্ষিত। এমন মানুষ কিভাবে এমন ব্যবহার করতে পারল সবাই আশ্চার্য্য হলো। তাই মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে না মিশে, বিয়ে-স্বাদী,আত্মীয়তায় জড়ানো ঠিক হবে না । এখানে পারিবারিক ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ন। কারন এক সাথে চলার পথে কিছু কিছু কর্ম আছে যা মানুষ পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে শিখে। শৈশব, কৈশরে যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার ছাপ থাকে। তাই সাবধানতা ও সচেনতা খুব প্রয়োজন। কিছু কিছু মানুষের স্বাভাবিক গুনাবলি আছে যা সুন্দর। যেমন কোন অনুষ্ঠানে গেলে নিজের খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে ড্রাইভারের দিকেই বেশী খেয়াল রাখে। বাসায় কাজের জন্য যে সাহায্যকারি তারও খেয়াল রাখে। আদর করে। এখনকার এপার্টমেন্ট বাড়ী গুলোতে সিকিউরিটি-কেয়ারটেকার থাকে তাদেরও খোজ-খবর নেয়। বড় বড় উৎসবে এদের খেয়াল করে। এমন ছোট ছোট কাজ কিন্ত আন্তরিকতা, মহানুভবতা মানুষের আসল ভদ্রতার পরিচয় বহন করে। তার উল্টোটাও দেখেছি। নিজের সব ঠিকঠাক থাকলেও অধস্তন লোকদের খোজ খবর খুব একটা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। অথচ এটা মানুষের মনুষ্যত্ব বহন করে। তাইলে এমন মানুষের সাথে কিভাবে জীবনকে ওতপ্রতোভাবে জড়ানো যায়? সর্বোপরি আরেকটি ব্যাপার হলো আজকের আমাদের দেশে মাদকের যে ভয়াল ছোবলে কিশোর-যুবকরা গ্রামে-গঞ্জে, শহর-পাড়া গাঁয়ে সর্বত্র আক্রান্ত হয়ে পড়ছে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রত্যেক বাবা-মা অথবা পরিবারের সকল মুরুব্বিদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। বলতে গেলে সন্তানের চলাফেরা, সন্তানের বন্ধু-বান্ধব, সহচরদেরকেও খেয়াল করতে হবে। অসতর্কতায়, এ মাদক যে কোন পরিবারের কিশোর-যুবকরা আক্রান্ত হয়ে নিজের জীবনকে ও সাথে সাথে নিজ পরিবার, সমাজ তথা দেশকে ধ্বংশের প্রান্তে নিয়ে যাবে। মডেল : শামিম জাহিদ ও স্বপ্নিল
×