ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক হয়ে ওঠার স্লোগান পদাতিকের ‘জনমাংক’

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মানবিক হয়ে ওঠার স্লোগান পদাতিকের ‘জনমাংক’

সাজু আহমেদ ॥ সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে মানুষ জন্মের পর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনার মাধ্যমে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পায়। নিজের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার সংগ্রামে ওই তিন অভিভাবকের ঋণ শোধ করা প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে এসব দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন মানুষের মানিবক গুণাবলিতে ঋদ্ধ হওয়া। কিন্তু ক’জনই বা পারে এই গুণাবলি অর্জন করতে। মানুষের জীবন সংগ্রামে মানবিক হওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু তাই নয় মানুষ আসলে কে? মানুষের সংজ্ঞা নির্ধারণও আজকের বিশ্বের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সভ্যতার বিবর্তনে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে বিশ্ব সমাজে নানাবিধ বৈষম্য যখন প্রকট তখন পুরুষ কি একাই সমগ্র মানবজাতির ধ্বজাবাহী? নারী কি শুধুই পুরুষের প্রয়োজন মেটানোর হাতিয়ার? এই পুরুষশাসিত সমাজে প্রয়োজন মিটে গেলেই নারীর বেঁচে থাকাটাও কি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় না? পেশিশক্তির দাপটে স্বার্থপরতার চাদরে ঢাকা পড়ে মানবিকতার শুভ্র আবেগ। নিজেদের ক্ষুদ্র শক্তিকেও মানুষ খ-িত করে ফেলে নারী-পুরুষের বিভাজনে। আর তখন প্রবল পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ ঠেকিয়ে বেঁচে থাকাই যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে খ-িত শক্তির জন্য। এমনি বক্তব্য উঠে এসেছে বাংলাদেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন পদাতিকের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘জনমাংক’ নাটকে। দলের ৩২তম প্রযোজনা ‘জনমাংক’ নাটকটি রচনা করেছেন প্রতিভাবান নাট্যকার নাসরীন মুস্তাফা। নির্দেশনা দিয়েছেন মীর মেহেবুব আলম নাহিদ। নাট্যকাহিনীতে দেখা যায় সমুদ্রবেষ্টিত এক জনপদের পুরুষ নামধারী তথাকথিত মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থপরতা। যা আহত করে আমাদের। মানবতার অপমান ক্ষুব্ধ করে আমাদের। প্রকৃতির রুদ্র রোষে ভীত মানুষ নারী আর পুরুষে বিভক্ত হলে পেশিশক্তির দাপটে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে পুরুষরাই। নারীদের ঠেলে ফেলা হয় ক্ষুব্ধ সাগরের বুকে। আপাতদৃষ্টিতে সবল পক্ষটি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের জীবনের ছন্দপতন ঘটে। নারী ছাড়া পুরুষের জীবন কতখানি শুষ্ক আর নিরানন্দের হতে পারে, টের পায় পুরুষেরা। নারী আর পুরুষের যৌথ অবস্থানই যে মানুষের জীবনের সার্থকতা এনে দেয়, প্রতিষ্ঠিত করে মানবতার জয়গান, সময়ের আবর্তনে বুঝে ওঠে পুরুষেরা। অন্যের অধিকার হরণ করে বেঁচে থাকা নয়, বিসর্জনে প্রস্তুত ‘মানুষ’ অবশেষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় প্রবল প্রতিপক্ষ সাগর দেবতার। এভাবে একটি জনগোষ্ঠীর মানবিক হয়ে ওঠার প্রয়াস স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ নাট্যকাহিনীতে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেন মসিউর রহমান, শাখাওয়াত হেসেন শিমুল, ওয়ালিদ, জিনিয়া, কামরুল, জনি, ইকরাম, শুভ, সুমন, চমক, লিমন, শরিফ, ইমরান, তাসমি চৌধুরী, স্বরূপ। নাটকের আলোক নির্দেশনায় ফয়েজ জহির, মঞ্চ, পোশাক ও দ্রব্যআলী আহমেদ মুকুল, আবহ পরিকল্পনা তপন কুমার সরকার, কোরিওগ্রাফি ফাহমিদা আলম পাখি, আবহ পরিচালনা হামিদুর রহমান পাপ্পু, পরিচালনা সহযোগী লিমন, ইমরান। দলসূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘জনমাংক’ নাটকের ১৮তম প্রদর্শনী হবে।
×