ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমছে কৃষি জমি

বরগুনায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাঁটিতে পুড়ছে কাঠ

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

বরগুনায় অর্ধশতাধিক  অবৈধ ইটভাঁটিতে পুড়ছে কাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা, ২২ জানুয়ারি ॥ নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বরগুনায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ভাঁটিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাঁটি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর চালানো হচ্ছে। প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতরের চোখের সামনে এসব অবৈধ ইটভাঁটি চালানো হলেও এ ব্যাপারে তাদের নেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ। শুধু বছরে একবার লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মধ্য দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যক্রম। স্থানীয়দের দাবি পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত আর্থিক সুবিধা দিয়েই চালানো হচ্ছে এসব অবৈধ ভাঁটি। অন্যথায় কোনভাবেই চালানো সম্ভব নয়। বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ২৭টি ইটভাঁটি অনুমতি রয়েছে এবং এর বাইরে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ভাঁটির কোন অনুমতি নেই। ইটভাঁটি নিয়ন্ত্রণে কঠিন আইন থাকা সত্ত্বে¡ও কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট ক্লিন অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাঁটি করার কথা থাকলে এখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে বাংলা ও ড্রাম চিমনির মাধ্যমে। তাছাড়া লোকালয়ের পাশেই ফসলের মাঠে গড়ে ওঠা এসব ইটভাঁটিতে যেমন নষ্ট করা হচ্ছে কৃষি জমি, অন্যদিকে বনভূমি উজাড় করে কাঠ পোড়ানোর কারণে মারাত্মকভাবে দূষণ করা হচ্ছে পরিবেশ। তবে পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ভাঁটি চালানো হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার সোবাহান কাজীর এমসিকে ব্রিক্স, তালুকদার বাজারে এইচআরপি ব্রিক্স, তালতলা এইচবিএম কিশোর খান ব্রিক্স, শাখারিয়ায় বিজয় এ্যান্ড বিএসসিও ব্রিক্সসহ জেলার তালতলী, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাংলা ড্রাম চিমনির মাধ্যমে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এমনকি কোন ধরনের চিমনি ছাড়াও পাঁজা করেই ইট পোড়ানো হয়। বেশিরভাগ জায়গায় কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠছে ইটভাঁটি। এতে পার্শ্ববর্তী কৃষকরা পড়েছেন বড় বিপাকে। অনেক ভাটার পাশে কড়াতকল বসিয়ে কাঠ চেড়াই করে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে। আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গায় এমসিকে ব্রিকসের মালিক সোবহান কাজী জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া ইটভাঁটি চালাচ্ছেন বলে স্বীকার করে বলেন, আমরা পরবর্তীতে জিগজ্যাগ করার চেষ্টা করছি। তবে তিনি এভাবে কয়েক বছর চালিয়ে আসছেন। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা হয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাঁটি অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট্ ব্রিক ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোন প্রযুক্তির ইটভাঁটি স্থাপন করতে হবে। কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা হতে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতেও নিষেধ রয়েছে। ইটভাঁটিতে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদফতরের কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া ওইসব ভাঁটির অধিকাংশ মালিক সরকারের নির্ধারিত ভ্যাটও পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমতলী উপজেলার তালুকদারহাটের এক ব্যবসায়ী জানান, যারা ভাঁটি করছেন তারা খুবই প্রভাবশালী এবং তাদের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অনেক লোক আছে। যে যাই বলুক তাদের এ অবৈধ ইটভাঁটি বন্ধ হবে না। লোকালয়ে ভাটার এসব বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
×