ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রযুক্তি হাসপাতালে সিভিল সার্জনের অভিযান: দ্বিগুণ ফি, ডাক্তার নেই, এক্স-রে মেশিনও নেই

মারুফুর রহমান, শেরপুর

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৬, ২৯ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি হাসপাতালে সিভিল সার্জনের অভিযান: দ্বিগুণ ফি, ডাক্তার নেই, এক্স-রে মেশিনও নেই

জনকণ্ঠে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেরপুর শহরের নারায়ণপুর এলাকার "প্রযুক্তি হাসপাতাল" অবশেষে প্রশাসনের নজরে এসেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে জেলার সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম পরিদর্শনে গেলে চমকপ্রদ অনিয়মের তথ্য উঠে আসে।

পরিদর্শন কারীদের তথ্য মতে  নিম্নোক্ত অনিয়মগুলো প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়:

*নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার-নার্স অনুপস্থিত: প্রাইভেট হাসপাতাল হিসেবে নিয়োগকৃত নির্ধারিত চিকিৎসক ও নার্স থাকার বিধান থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি।

*অতিরিক্ত ফি আদায়: বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের তথ্য আগে পাওয়া গেলেও, আজও কিছু ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়।

* যন্ত্রের অভাব: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে সব টেস্ট আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে হয়, কিন্তু সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সেখানে এক্স-রে মেশিনই নেই।

* বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল অবস্থা: চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণ ও সংরক্ষণের কোনো প্রথাগত ব্যবস্থা সেখানে নেই, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

* রোগী হয়রানি ও আর্থিক প্রতারণা: অতিরিক্ত টাকা আদায়ের পাশাপাশি রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং হয়রানির অভিযোগও উঠে এসেছে।

সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন জনকণ্ঠকে বলেন, “জনকন্ঠ পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর আমরা সরেজমিনে তদন্তে যাই। একাধিক অনিয়ম চোখে পড়ে এবং আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। তারা লিখিত ব্যাখ্যা দিতে না পারলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”পরিদর্শনে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হাসপাতালটি একেবারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্যবিধিগত কোনো শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। পরিবেশ ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক উপস্থিতি, সবই প্রশ্নবিদ্ধ।”

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। 

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এই ঘটনাটি শুধু একটি হাসপাতালের নয়, বরং গোটা জেলার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। তাদের দাবি:

*প্রতিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে নিয়মিত তদন্ত চলমান থাকতে হবে। 

*স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্রিয় তদারকি:

নির্ধারিত ফি নিশ্চিতকরণ ও লেনদেনের ডিজিটাল ট্র্যাকিং নিশ্চিত করতে হবে। 

*পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত নজরদারি না থাকলে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা চলতেই থাকবে। জনস্বাস্থ্যকে বাণিজ্যের নামে জিম্মি করা থেকে পরিত্রান পেতে হলে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে নিয়মিত অভিযান চলমান রাখা জরুরী। 

রাজু

×